Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

মেয়েটাকে আর ভাল স্কুলে ভর্তি করা হল না

বৃহস্পতিবার দুপুরে শান্তিপুর বল্লভী আচার্য পাড়ায় নিজের বাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতেই বলছিলেন, “জানেন গত সোমবারও মেয়েটা এল। ঘণ্টা দু’য়েকের জন্য এসেছিল। ডিউটি থাকায় ছুটতে হল আবার দুপুরেই। সেই শেষ বারের মতো আসা। শুক্রবার এক আত্মীয়ের বৌভাত উপলক্ষ্যে ছুটি নিয়ে আবার আসার কথা ছিল। তখন তো জানতাম না যে ওকে আর জীবন্ত দেখতে পাবো না!”

নিহত হোমগার্ডের স্বামী। বৃহস্পতিবার শক্তিনগর হাসপাতালে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

নিহত হোমগার্ডের স্বামী। বৃহস্পতিবার শক্তিনগর হাসপাতালে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৩১
Share: Save:

চোখের জল শুকোচ্ছে না ভারতী দালালের। এক দিকে বৌমার আকস্মিক মৃত্যু, অন্য দিকে এগারো মাসের ছোট্ট নাতনীকে কী ভাবে বড় করবেন সেই চিন্তা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শান্তিপুর বল্লভী আচার্য পাড়ায় নিজের বাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতেই বলছিলেন, “জানেন গত সোমবারও মেয়েটা এল। ঘণ্টা দু’য়েকের জন্য এসেছিল। ডিউটি থাকায় ছুটতে হল আবার দুপুরেই। সেই শেষ বারের মতো আসা। শুক্রবার এক আত্মীয়ের বৌভাত উপলক্ষ্যে ছুটি নিয়ে আবার আসার কথা ছিল। তখন তো জানতাম না যে ওকে আর জীবন্ত দেখতে পাবো না!” এ দিন সকাল আটটা নাগাদ বাড়িতে খবর আসে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ভারতীর পুত্রবধূ দেবশ্রী। তার পরেই আসে তাঁর মৃত্যু সংবাদ।

পারিবারিক সূত্রের খবর, বছর ছয়েক আগে দেবশ্রী ভালোবেসে বিয়ে করেন শান্তিপুরের অমিত দালালকে। শান্তিপুর কলেজ থেকে বিএ পাশ করে চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ভাল খেলোয়াড় ছিলেন। কলেজ এবং জেলা স্তরে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। চাকরির জন্যও পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই ভাবেই গত অক্টোবর মাসে হোমগার্ডের চাকরি পান। প্রথমে প্রশিক্ষন হয় উত্তরবঙ্গে। পরে যোগ দেন চাপড়ায়। দিন পনেরো আগে তিনি কৃষ্ণনগর পুলিশ লাইনে এসেছিলেন। বাপের বাড়ি টালিখোলা থেকে যাতায়াতের সুবিধা বলে এগারো মাসের মেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকতেন। স্বামী থাকতেন শান্তিপুরের বাড়িতে। মাঝেমধ্যেই দেবশ্রী চলে যেতেন স্বামীর কাছে, শান্তিপুরে। গত সোমবারও তিনি গিয়েছিলেন। দেবশ্রীর শাশুড়ি ভারতী দালাল বলেন, “যখনই বাড়ি আসত একাই নিজের ঘর-বাড়ি সব গুছিয়ে রাখত। কয়েক মাস আগে মেয়ের অন্নপ্রাশনে এসেছিল। ও আর ফিরবেনা ভাবতেই পারছিনা।” দেবশ্রীর শ্বশুর বিশ্বনাথ দালালের কথায়, “এগারো মাসের মেয়ে। বৌমা বলত ওকে ভাল স্কুলে পড়াবো। মানুষের মতো মানুষ করবে। সবাইকে ফেলে রেখে চলে গেল।”

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ স্বামীর সঙ্গে ফোনে শেষ বারের মত কথা হয় দেবশ্রীর। তখন জানান, কৃষ্ণনগরে পৌঁছেছেন। ডিউটিতে যাচ্ছেন। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সব শেষ। বিধ্বস্থ, শোকস্তব্ধ অমিত বলেন, “ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Death Mourn Home Guard Firing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE