Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

নিঝুম জলের তলায় ঘুমিয়ে আছে মানসের মা

সুফিয়ার স্বামী ডোমকলের ভাতশালা হাইমাদ্রাসার শিক্ষক মহম্মদ মাফিউল আলম মণ্ডল বলছেন, ‘‘জানেন তো ছোট ছেলেটা এখনও ঘুমের ঘোরে মা’কে খোঁজে। রাস্তায় কখনও মায়ের হাত ধরে ওর বয়সী কেউ হেঁটে গেলে জিজ্ঞেস করে—মা কোথায় গেল বাবা?’’ মাফিউল চুপ করে থাকেন। ভাবেন, ছেলেকে বলেন, ‘মা তোর জলের তলায় ঘুমিয়ে বাবা!’

রশিদা বেওয়া। বক্সিপুরে। নিজস্ব চিত্র

রশিদা বেওয়া। বক্সিপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল ও করিমপুর শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৯
Share: Save:

বহরমপুরে বাপের বাড়িতে নেমে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল শমসেরগঞ্জের শিক্ষিকা সুফিয়ার মমতাজের। জলঙ্গি থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাসটিতে চড়ে বসেছিলেন তিনি। ঘর ছাড়ার আগে, দু’বছরের মানিশের কপালে একটা ছোট্ট চুমু এঁকে দিয়েছিলেন সুফিয়া। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই খবর এসেছিল, বাস পড়েছে বিলের জলে।

সুফিয়ার স্বামী ডোমকলের ভাতশালা হাইমাদ্রাসার শিক্ষক মহম্মদ মাফিউল আলম মণ্ডল বলছেন, ‘‘জানেন তো ছোট ছেলেটা এখনও ঘুমের ঘোরে মা’কে খোঁজে। রাস্তায় কখনও মায়ের হাত ধরে ওর বয়সী কেউ হেঁটে গেলে জিজ্ঞেস করে—মা কোথায় গেল বাবা?’’ মাফিউল চুপ করে থাকেন। ভাবেন, ছেলেকে বলেন, ‘মা তোর জলের তলায় ঘুমিয়ে বাবা!’

রশিদা বেওয়া এখনও চমকে ওঠেন মাঝে মাঝে। উঠোনে পা ছড়িয়ে বলছেন, ‘‘স্বামীরে খেল দুর্ঘটনা, আর গ্যালো বার ছেলে দুইডারে এক সঙ্গে খেল ভাণ্ডারদহের কালো পানি, আমি কেন বেঁচে রইলাম, কইতে পারেন!’’

ছেলে যে বাস নিয়ে বেরিয়েছে জানতেন রশিদা। কিন্তু খবরটা যখন পেলেন, মনে মনে ভেবেছিলেন, ছেলে তো ড্রাইভার। দু’ঘটনার সময়ে ওরা ঠিক ঝাঁপিয়ে পালায়! সেন্টু পারেনি। ঝাঁপ সে দিয়েছিল। কিন্তু ভারী বাস পড়েছিল তার ঘাড়ে। জলের কাদায় গেঁথে গিয়েছিল সে। বলছেন, ‘‘বালিরঘাটে গিয়েছি তার পরে। মনে হয়েছে, জলডারে প্রশ্ন করি, এ ভাবে ছেলে দু’টারে খেলি!’’

এখনও সেই বাসের চালক আর হেল্পার, তাঁর দুই ছেলে সেন্টু আর মিন্টুকে স্বপ্নে দেখেন রশিদা। এই তো গত শনিবার, রশিদা বলছেন, ‘‘স্বপ্নে ওদের দেখে চমকে উঠলাম। কত ডাকলাম, সাড়াই দিল না।’’

২২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছিলেন দুর্ঘটনায়। এক বছর আগে ছেলেরা তাঁকে ছেড়ে গিয়েছে। আর গত বছর ২৯ জানুয়ারি সকালে সেন্টুর স্ত্রী ঘর ছেড়েছেন স্বামী মারা যাওয়ার পরেই। মিন্টুর বউ পারভিনা খাতুন বছর আটেকের ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে থাকেন পাশের বাড়িতে। এখন রশিদা একা।

পড়শি জেলা নদিয়ার করিমপুরেরও ছিলেন অনেকে। মানস পাল তাঁদেরই এক জন। ঘটনার এক বছর পরেও ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছেন মানসের মা মায়াদেবী।

মানসের বাবা জয়দেব বলেন, “সামান্য জমি না থাকায় দিনমজুরি করেই আমাদের একমাত্র ছেলে মানসকে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছিলাম। স্নাতক হয়ে টিউশন করে সংসারের হাল ধরেছিল। তারপর থেকে ছেলে আমার দিনমজুরের কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০১৩ সালে সুতি ব্লকের ফতুল্লাপুর শশিমণি উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছিল। কেন এমন হল বলুন তো!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident Mourn Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE