Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
আমার পুজো

হাট থেকে মেয়ের জন্য সস্তার জামা কিনেছি

কিন্তু এ বার এক করোনা আর লকডাউন সব এলোমেলো করো দিল।’’ বাবলু জানালেন, হাতে কোনও টাকা নেই। ঠাকুর দেখা বা বাইরে খাওয়া কিছুই এ বার হবে না।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

বাবলু দাস
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০১:৫১
Share: Save:

বছর তেরোর কিশোরী বাবা-র কাছে সমানে বায়না করে চলেছে একটা নতুন জামার জন্য। তার সব বন্ধুদের নতুন জামা হয়েছে। শুধু তার হয়নি। মেয়ের বায়নার কাছে বড্ড অসহায় বোধ করছেন ময়ূরহাটের বাসিন্দা বাবলু দাস। হাঁসখলির ময়ূরহাট দাসপাড়ার বাসিন্দা বাবলু ঢাক তৈরি করেন। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে গিয়েই কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। জামা কেনার টাকা পাবেন কোথা থেকে! ‘‘শেষে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারিনি। গ্রামের হাট থেকে একটা শস্তার জামা কিনে নিয়ে গিয়েছি। তাতেই মেয়ে খুশি। জামাটা হাতে নিয়ে উঠোনময় প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াচ্ছে সে।

সে দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে বাবলুর। বলেন, “আমরা গরিব, তবু কোনওবার পুজোয় এমন অবস্থা হয় না। প্রতিবার বউ-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বগুলায় বাজারে গিয়ে কত আনন্দ করে সকলের জন্য জামা-কাপড় কিনে আনি। পুজোর চার দিনই ঠাকুর দেখতে বের হই। কোনও দিন রানাঘাট, কোনও দিন বগুলা, আবার কোনও দিন মাজদিয়া গিয়েছি ঠাকুর দেখতে। রাতে বাইরে খেয়ে ফিরেছি। কিন্তু এ বার এক করোনা আর লকডাউন সব এলোমেলো করো দিল।’’ বাবলু জানালেন, হাতে কোনও টাকা নেই। ঠাকুর দেখা বা বাইরে খাওয়া কিছুই এ বার হবে না।

প্রতি বছর পুজোর আগে ১৫-১৬টা করে ঢাক তৈরির বায়না পেয়ে থাকেন বাবলু। এক-একটির জন্য ৬-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়েছে তাঁর। কিন্তু এই প্রথম একটিও বায়না পাননি। করোনার কারণে পুজো কমিটিগুলির থেকে ঢাকিরা সে ভাবে টাকা পাননি। ফলে নতুন ঢাক তৈরির বায়না হয়নি। বাবলুর কথায়, “আগে কোনও দিন পুজোর মুখে এমন কঠিন অবস্থার সামনে পরিনি। জানি না আগামী দিন কী অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য।” মা দুর্গার কাছে তাই এখন একটাই প্রার্থনা তাঁর, “আমাদের মতো গরিব মানুষগুলির বাঁচার ব্যবস্থা করে দাও মা। সব কিছু তাড়াতাড়ি ঠিক করে দাও।”

(ঢাক তৈরির কারিগর)

অনুলিখন: সুস্মিত হালদার

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE