Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Drone

বোমার খোঁজে হিজুলির আকাশে ড্রোন

পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই এলাকায় উত্তাপ বাড়ছিল। তবে মাঠপাড়া সেই তালিকায় ছিল না।

খোঁজ। হিজুলিতে। নিজস্ব চিত্র

খোঁজ। হিজুলিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ০৩:৪৮
Share: Save:

বোমা খুঁজতে শেষতক ড্রোন উড়ল আকাশে!

বেলডাঙা বেগুনবাড়ির হিজুলি মাঠপাড়া নিতান্তই এক আটপৌরে জনবসত। কিন্তু সেই ছাপোষা গ্রামই গত কয়েক দিনে বোমাবাজির সৌজন্যে আকাশে উড়তে দেখল অজানা এক ‘পাখি’, গ্রামীণ পরিভাষায় তাকে যত নরম করেই ডাকা হোক আদতে জেলা পুলিশের মাথারা স্বীকার করেছেন গ্রামের আনাচকানাচে বোমার হদিস পেতে ড্রোন ওড়ানো হচ্ছে আকাশে।

পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই এলাকায় উত্তাপ বাড়ছিল। তবে মাঠপাড়া সেই তালিকায় ছিল না। এ বার সেই গ্রামেও বারুদ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল কেন, তা নিয়ে তৃণমূলের একাংশের মধ্যেই ইশারা মিলেছে— দলে প্রত্যাবর্তনের পরে এলাকায় তাঁর দাপট দেখাতে এবং হিরুদ্ধ গোষ্ঠীর যাতে কেউ মাথা তুলতে না পারে তা মনে করিয়ে দিতেই এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছেন হুমায়ুন কবীরের অনুগামীরা। হুমায়ুন অবশ্য তা মানতে চাননি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমাকে নিয়ে এমন বিতর্ক যারা তুলছে তারা আমার নয়, দলেরই ক্ষতি করবে। আর এটাও জেনে রাখুন, মাঠপাড়ায় এমন কোনও রণক্ষেত্র তৈরি হয়নি যে ড্রোন নামিয়ে পুলিশকে হাততালি কুড়োতে হবে। এ সবই পুলিশের একাংশ দলের গায়ে কালি লাগাতে করছে!’’ এ ব্যাপারে তিনি বিরোদীদেরও ছেড়ে কথা বলছেন না। মনে করছেন, তাদের ‘অপপ্রচার’ও রয়েছে এর মূলে। বিধায়ক রবিউল আলম অবশ্য ‘‘এ সব দলীয় বিবাদ নয়। নিছকই দু’পাড়ার গন্ডগোল’’ বলে দায় এড়িয়েছেন।

দলের অন্দরের খবর, রেজিনগরের প্রাক্তন বিধায়ক হুমায়ূন কবীর তৃণমূলে যোগ দিতেই ওই এলাকায় দলের গোষ্ঠী বিবাদ শুরু হয়েছে। এক দাপুটে জেলা নেতা, যিনি হুমায়ুন বিরোধী বলে পরিচিত, তাঁর কথায়— ‘‘হুমায়ুন এলাকায় নিজের শক্তি কায়েম করতেই বোমাপৃর আমদানি করছে। স্থানীয় বিধায়ক রবিউলের ক্ষমতা মাপতেই এমন কাণ্ড।’’ পাল্টা বলছেন হুমায়ুনের এক পরিচিত অনুগামী, ‘‘বলতে লজ্জা লাগছে, ওই বোমা-কাণ্ডের পিছনে রয়েছেন রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল আলমের লোকজন। রবিউলের প্রচ্ছন্ন মদত ছাড়া এ কাজ হতেই পারে না। হুমায়ূনের দলে ফেরা সহ্য করতে না পেরে এলাকায় অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি।’’

১২ অগষ্ট বেলডাঙার বেগুনবাড়ির মাঠপাড়া এলাকায় মুড়ি মুরকির মতো বোমা পড়ে। পুলিশের দাবি প্রায় ৪০০ বোমা পড়েছে। চলেছে গুলিও। তবে জেলা পুলিশের কর্তারা গুলির কথা স্বীকার করেননি। ওই ঘটনায় পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় ড্রোনের নজরদারি। জেলা পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, “বোমাবাজির ঘটনায় দু’বারে মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা কোনও অশান্তি বরদাস্ত করব না।’’

আর ওই ঘটনার পর থেকেই এলাকা হয়েছে পুরুষ-শূন্য। যা দেখে হুমায়ুনও বলছেন, ‘‘ভাবতে খারাপ লাগছে, এত দিন পরে দলে ফিরলাম। অনেকেই এসে দেখা করে গেলেন। কিন্তু তা সহ্য হচ্ছে না অনেকের। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান লুৎফর রহমান তাঁদেরই এক জন। তিনি কার ঘনিষ্ঠ তা উল্লেখ করছি না। কিন্তু লুৎফরের লোকজনই এমন হামলা চালায় যে গ্রামের পুরুষেরা ঘর ছাড়া।’’

পুলিশের ব্যাখ্যা, বেলডাঙার প্রত্যন্ত অঞ্চল এই হিজুলি মাঠপাড়া। বিস্তীর্ণ ও ঘনবসতি পূর্ণ এই এলাকায় প্রচুর মাঠ। পাটের খেত। বড় জলাশয়ও রয়েছে। সঙ্গে ঘন জঙ্গল। সেখানে সব জায়গায় পুলিশ ঢুকতে পারছে না। রয়েছে অতি সংকীর্ণ সব গ্রামীণ-গলি। সব মিলে কোথায় বোমা তৈরি হচ্ছে, কোথা থেকে বোমা আসছে, কারা বোমা সরবরাহ করছে এই প্রত্যন্ত এলাকায়। কি ভাবেই বা আসছে— খোঁজ করতেই আকাশে ড্রোন ওড়াচ্ছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এলাকায় প্রচুর মাঠ, পাটের জমি থাকায় ওই গ্রামীণ এলাকায় নজরদারি চালাতে ড্রোনই তাই একমাত্র ভরসা।”

অন্য বিষয়গুলি:

Drone Bombs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy