জঞ্জালে ভরে গিয়েছে নালা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
প্রায় দেড় শতাব্দী আগে পুরসভার তকমা পায় জঙ্গিপুর। সেই ব্রিটিশ জমানায় শহরের মূল রাস্তার দু’ধারে তৈরি হয়েছিল নিকাশি নালা। ভরা বর্ষায় জঙ্গিপুর ও রঘুনাথগঞ্জ-দুই শহরের বাড়তি জল সেই নালা বেয়ে গিয়ে মিশত ভাগীরথীতে। কিন্তু কালক্রমে সেই নিকাশি নালা বুজে গিয়েছে আবর্জনায়। শহরের বিভিন্ন অংশের প্লাস্টিক অবরুদ্ধ করে দিয়েছে নালাগুলিকে।
প্লাস্টিক ব্যবহার রুখতে একাধিকবার পুরসভাগুলিকে সতর্ক করেছে রাজ্য সরকার। ২০০৪ সালে তদানীন্তন মুখ্যসচিব তাঁর নির্দেশে পুরসভাগুলিকে প্লাস্টিক ও ক্যারিব্যাগের ব্যবহার রোধ করার কথা বলেন। ২০০৬ সালে পুনরায় তত্কালীন মুখ্যসচিব অমিতকিরণ দেব অন্যান্য পুরসভাগুলির মত জঙ্গিপুরকেও চিঠি পাঠিয়ে জানান, “১৯৮৬ ও ১৯৯৬সালের পরিবেশ বিষয়ক আইনের বিভিন্ন ধারা প্রয়োগ করে প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে হবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পুরসভাকে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।”
কিন্তু সেই নির্দেশমত বামেদের দখলে থাকা জঙ্গিপুর পুরসভা কোনও কাজই করেনি বলে অভিযোগ। শহরের মুদির দোকানে এখনও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেওয়া হয়। সব্জি-মাছ-মাংসের দোকানেও পাতলা ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করেন বিক্রেতারা। আর ক্রেতারা না বুঝে প্লাস্টিকের ব্যাগেই জিনিসপত্র নেন। মিষ্টির দোকান থেকে শুরু করে চায়ের দোকান কোনও জায়গাতেই সচরাচর মেলে না মাটির ভাঁড়। পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ও কাপ। প্লাস্টিকের কাপ ও ক্যারিব্যাগ ফেলার জন্য শহরের পর্যাপ্ত পরিমানে ডাস্টবিনও নেই। ফলে শহরের মূল রাস্তা ও অলিতে-গলিতে লোকজন ফেলছে প্লাস্টিক। তবে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সিংহভাগই ফেলা হচ্ছে শহর নিকাশি নালাগুলিকে। ক্রমাগত প্লাস্টিক ফেলার কারণে শতাব্দী প্রাচীন জঙ্গিপুর শহরের বেশিরভাগ নিকাশি নালাই বুজে গিয়েছে। ফলে বৃষ্টির অতিরিক্ত জল এখন নর্দমায় যেতে পারে না।
পুরসভার বিরোধীপক্ষ থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের একাংশ যত্রতত্র প্লাস্টিক পড়ে থাকায় বিধছে পুরসভাকে। জঙ্গিপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারহাদ আলি বলেন, ‘‘ক্যারিব্যাগ ক্ষতিকর জেনেও জঙ্গিপুরের ব্যবসায়ীরা তা বন্ধ করছেন না। এ ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতন করতেও কোনও উদ্যোগ নেন না পুরকর্তারাও। তাছাড়া সরকারি আদেশনামা অগ্রাহ্য করে প্লাস্টিক রোধে সদর্থক ভূমিকাও নেন না পুরকর্তারা।” জঙ্গিপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী অশোক সাহা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক ব্যবহারের অপরাধ প্রমাণিত হলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেলা বা এক লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। অশোকবাবু বলেন, “আইন থাকলেও পুরসভা সে আইন কার্যকর করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। প্লাস্টিক কোনও পথ দিয়ে জেলায় ঢুকছে তা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর সেই ‘সোর্স’ বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরসভা কিছুই করছে না। স্থানীয় শ্রীকান্তবাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্পল মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘ভাগীরথীর ৫০ মিটারের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ নিয়ে সরকারের কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু শহরে তা মানা হচ্ছে না। পুরকর্তারা ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না।”
বিরোধীদের অভিযোগ, জেলার কংগ্রেস পরিচালিত বহরমপুর পুরসভা শহর থেকে প্লাস্টিক হঠাতে পেরেছে। স্রেফ সদিচ্ছার কারণে। কিন্তু জঙ্গিপুর পুরসভার গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্যই শহরের প্লাস্টিক অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে নিকাশিনালাকে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী তথা বর্তমানে বিরোধী দলনেতা সমীর পন্ডিত বলেন, ‘‘জঙ্গিপুরের আনাচে-কানাচে ডাঁই হয়ে থাকে প্লাস্টিক। ফলে শহরের নিকাশী ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বাম নিয়ন্ত্রিত জঙ্গিপুরের পুরকর্তারা এ ব্যাপারে উদাসীন।” পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘সব নিকাশীনালাই প্লাস্টিক ও আবর্জনায় পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বহুভাবে শহরে প্লাস্টিক বিরোধী প্রচার চালানো হয়েছে। ব্যবসায়ী, নাগরিক, বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। এ ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। তবে আমাদের আরও কড়া হওয়া উচিত্।”
শুধু নিকাশি নালা নিয়েই ভোটের আগে সরগরম নয় জঙ্গিপুরের রাজনীতি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে নর্দমার নোংরা জল ভাগীরথীতে ফেলার ঘটনা। রঘুনাথগঞ্জের ডোমপাড়া, ষষ্টিতলা, ব্লক কার্যালয়ের পাশের বড় নর্দমার যাবতীয় নোংরা জল পড়ছে ভাগীরথীতে। কংগ্রেসের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তা সিংহ বলেন, ‘‘কেন্দ্র গঙ্গা দূষণ রোধে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ চালু করেছে। অথচ নর্দমার জল ফেলে যেভাবে গঙ্গাকে দূষিত করা হচ্ছে তা ভাবা যায় না।’’ পুর প্রধান বলেন, ‘‘নর্দমার জলকে শোধন করে গঙ্গায় ফেলার জন্য ১৫০ কোটি টাকার পরিকল্পনা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy