মার্কশিট। নিজস্ব চিত্র।
অতিমারি কালের উচ্চ-মাধ্যমিকে পাশের হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। কিন্তু ফলাফল প্রকাশিত হতেই উঠছে সেই সব প্রশ্ন, যা দু’দিন আগে শোনা গিয়েছিল মাধ্যমিক ঘিরে। কোনও স্কুলে ভালদের ফল আশানুরূপ নয়। কোথাও উল্টো। কোনও স্কুলে বিরাট সংখ্যক পড়ুয়া অকৃতকার্য হয়েছে। কী করে হল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না শিক্ষকেরাই। সব মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল নিয়ে শিক্ষকমহল দ্বিধাবিভক্ত।
স্কুল শিক্ষকদের একাংশ মনে করছে— এই ফলাফলে ছাত্র-স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রয়েছে, সুতরাং তা অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর কাছে গ্রহণযোগ্য। অন্য দিকে, আর একদল একের পর এক নজির দেখিয়ে বলছে— এই ফলাফলে পড়ুয়াদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়নি। মেধাবী বা ভালদের জন্য এই মূল্যায়ন খারাপ হয়েছে।
কল্যাণী ইউনিভার্সিটি এক্সপেরিমেন্টাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছন্দ বিশ্বাস বলেন, “এই রেজাল্ট সকলের জন্য আদৌ ভাল নয়। আমাদের স্কুলে এমন ছাত্র আছে যে, মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। অথচ, এ বার সে ফেল করেছে। ওরা পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ দেখছি। অনেকে রিভিউ তো করবেনই। পরীক্ষায় এই ফল গ্রাহ্য না করে পরীক্ষায় বসা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন অনেক অভিভাবক এবং পড়ুয়া। স্কুল সূত্রে জানা গেল, এই স্কুলের ১৮৩ জনের মধ্যে ১৮০ জন পাশ করেছে। সর্বোচ্চ ৪৮৩ পেয়েছে পৃথা গুপ্ত।
আবার, নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর সাহা বলেন, “করোনা অতিমারির মধ্যে প্রায় দেশজুড়েই মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সম্মতিতে। আমাদের রাজ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন ছাত্রদের অর্জিত নম্বরের ভিত্তিতে তাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের কাছেই এই ফল গ্রহণযোগ্য।” এই স্কুলের ১৩৪ জনের মধ্যে ১৩৩ জন পাশ করেছে। সর্বোচ্চ ৪৮৫ পেয়েছে অয়ন সর্দার।
আবার, শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তী বলেন “এই ফলাফলে মেধার সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। ভাল ছেলেমেয়েরা সন্তুষ্ট নয়। ছাত্রদের বক্তব্য মাধ্যমিকের ফল, একাদশের পরীক্ষার নম্বর, প্র্যাক্টিকাল বা প্রোজেক্টের নম্বরের জটিল হিসাবনিকাশের চেয়ে পরীক্ষা সরাসরি হলে ওরা বেশি ভাল ফল করত। কিন্তু কোভিড কালে অন্য ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার উপায় ছিল না। ফলে, ভালদের খারাপ হয়েছে, মধ্য বা কম মেধার পড়ুয়াদের ভাল হয়েছে কোনও কোনও ক্ষেত্রে।” এই স্কুলে ১৫৭ জনের মধ্যে ১৫৬ জন পাশ করেছে। সর্বোচ্চ ৪৭০ পেয়েছে ব্রতীন মণ্ডল।
কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস উচ্চ-মাধ্যমিকের ফলাফল প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের স্কুলের দু’জন এবারে নবম স্থানে আছে। লিখিত পরীক্ষা হলে ওরা এমনই ফল করত। অর্থাৎ, ওদের প্রস্তুতি মতোই ফল পেয়েছে ছাত্রেরা। তুলনায় অনেক ভাল হয়েছে মূল্যায়ন।” এই স্কুলের ১৪৯ জনের মধ্যে ১৪৯ জন পাশ করেছে। সর্বোচ্চ ৪৯১ পেয়েছে অরিত্র বিশ্বাস এবং মৈনাখ সাহা।
তবে উচ্চ-মাধ্যমিকের এ বারের ফলাফল নিয়ে শুক্রবারই অভিভাবকদের একাংশ তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষকের কাছে। রিপন পাল বলেন, “ভাল ছেলেমেয়েদের কাছে এই ফলাফল একদম প্রত্যাশিত ছিল না। আমাদের স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর ৪৪৮। কিন্তু ছাত্রের অভিভাবকদের সঙ্গে আমরাও একমত যে, এই নম্বর ওর পাওয়ার কথা নয়। এমন অনেকের হয়েছে। অভিভাবকেরা রিভিউ করতে চাইছেন। তাতে কতটা কী হবে, জানি না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘করোনা কালে নিরুপায় হয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। কিন্ত এই ফলাফলে বহু মেধাবী পড়ুয়া উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে।” এই স্কুলের ২৯৫ জনের মধ্যে ২৯৩ জন পাশ করেছে। সর্বোচ্চ ৪৪৮ পেয়েছে আকাশ পাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy