Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

পাল্টা প্রতিবাদ, রোগী দেখলেন না চিকিৎসকেরা

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে বেসরকারি হাসপাতালে হামলা নতুন নয়। তবে, সেই ভাঙচুরের রেশ চিকিৎসকের বাড়ি পৌঁছে গেলে তা যে চিকিৎসাক্ষেত্রে সামগ্রিক ছাপ ফেলবে, বুধবার, তা মনে পড়িয়ে দিলেন রানাঘাট ও তার লাগোয়া বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০১:২৯
Share: Save:

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে বেসরকারি হাসপাতালে হামলা নতুন নয়।

তবে, সেই ভাঙচুরের রেশ চিকিৎসকের বাড়ি পৌঁছে গেলে তা যে চিকিৎসাক্ষেত্রে সামগ্রিক ছাপ ফেলবে, বুধবার, তা মনে পড়িয়ে দিলেন রানাঘাট ও তার লাগোয়া বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

মঙ্গলবার, রানাঘাটের চৌরঙ্গি এলাকায় একই নার্সিংহোমে দু-দু’জন রোগীর মৃত্যু ঘিরে যে তাণ্ডব হয়েছিল তার আঁচ পড়েছিল স্থানীয় এক চিকিৎসকের বাড়িতেও। এ দিন, তারই প্রতিবাদে, আইএমএ’র রানাঘাট শাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শহরের কোনও নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি অস্ত্রোপচারেও এগিয়ে আসেননি কোনও চিকিৎসক। চেম্বারে রোগীও দেখেননি তাঁরা। আর, তার জেরে চোখে পড়েছে, চেম্বারের সামনে রোগে-কাবু মানুষের ভিড়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা রোগীকে পাঠাতে হয়েছে সরকারি হাসপাতালে।

আইএমএ’র রানাঘাট শাখার সভাপতি গোরাচাঁদ সাউ বলেন, ‘‘রোগীর বাড়ির লোকের কোনও অভিযোগ থাকলে, তাঁরা নির্দিষ্ট জায়গায় তা জানাতে পারেন। তা বলে, ডাক্তারদের বাড়িতে চড়াও হয়ে বাড়ির লোককে হেনস্থা করা হবে!’’

কলকাতাতেও চিকিৎসক নিগ্রহের বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন তাঁরা। দু-একটি জেলা শহরে মিছিল শেষে বক্তব্যও রাখতে দেখা গিয়েছে তাঁদের কয়েক জনকে। রানাঘাট অবশ্য সে পথে হাঁটেনি। চিকিৎসা করা থেকে সরে দাঁড়িয়ে পাল্টা চাপ দিয়েছেন তাঁরা। যা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে চিকিৎসকদের একাংশকেও কিঞ্চিৎ বিব্রত করেছে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এতটা অমানবিক না হলেই ভাল হত। কয়েক জনের গুণ্ডামির খেসারত সব রোগীকে দিতে হল।’’

রোগী মৃত্যুর জেরে হাসপাতাল-নার্সিংহোমে ভাঙচুরের ঘটনা নতুন নয়। মাস কয়েক আগে, কলকাতার খিদিরপুর এলাকার একটি নার্সিংহোমে ভাঙচুর চালিয়ে অন্তত চব্বিশ ঘণ্টার জন্য বন্ধই করে দেওয়া হয়েছিল ওই হাসপাতালের এর্মাজেন্সি বিভাগ। তবে, সে ঘটনায় ডাক্তারদের গায়ে হাত পড়েনি। মঙ্গলবার, রানাঘাটের এভিনিউ নার্সিংহোমে অবশ্য ভাঙচুর থেমে থাকেনি ওই বেসরকারি হাসপাতালের চৌহদ্দিতে। লাগোয়া এলাকায় চিকিৎসকের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় রোগীর বাড়ির লোকজন। চিকিৎসকের স্ত্রীকেও ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ।

রানাঘাটের ওই নার্সিংহোমে সোমবার অস্ত্রোপচার হয়েছিল হবিবপুরের অনিতা পালের। তবে, তাঁর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। শেষ পর্যন্ত কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই মারা যান তিনি। অন্য এক মহিলাও ‘ভুল’ অস্ত্রোপচারের জেরে মারা গিয়েছিলেন ওই নার্সিংহোমে, বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সকালে, দেহ দু’টি নিয়ে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ, যা থেকেই ভাঙচুরের ঘটনা।

ওই দিনের ঘটনায়, অভিযোগের তির যে দুই চিকিৎসকের দিকে, তাঁরা অবশ্য ‘গাফিলতি’র কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। চিকিৎসক অশোক মৈত্র বলেন, ‘‘গাফিলতির কোনও প্রশ্নই নেই।’’ অন্য জন নীলাঞ্জন মিত্রের কথায়, ‘‘আমার চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না। এখানকার পরিকাঠামোয় যতটুকু করা সম্ভব সবই করা হয়েছিল।’’ এ দিন দু’জনেই জানান, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান তাঁরা।

কল্যাণীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্বাতী ভাংনানি জানান, মৃত্যুর জন্য চিকিৎসার গাফিলতি ছিল কি না, তা জানার জন্য দু’টি দেহের ময়নাতদন্ত কলকাতা এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে করা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors Deny Patients
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE