Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

গোর দেওয়া এজেখা উধাও এক দিনেই

গোরস্থানে সাবধান! একটু বৃষ্টি পড়লে তো কথাই নেই, না পড়লেই বা কী— কবরখানার আশপাশে কান পাতলে ঝুপঝাপ মাটি কোপানোর সন্তর্পণ কোদাল। গলা খাঁকারি দিলেই সব চুপচাপ। তারপর ফের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০১:২৩
Share: Save:

গোরস্থানে সাবধান!

একটু বৃষ্টি পড়লে তো কথাই নেই, না পড়লেই বা কী— কবরখানার আশপাশে কান পাতলে ঝুপঝাপ মাটি কোপানোর সন্তর্পণ কোদাল। গলা খাঁকারি দিলেই সব চুপচাপ। তারপর ফের।

গোরস্থানে সাবধানের দ্বিতীয় পর্বটা নির্দ্বিধায় লিখে ফেলা যেত যদি না দস্তুরহাট গ্রামের মানুষ এতটা হইচই বাধাতেন। গত ক’দিন ধরে, মুর্শিদাবাদের ওই প্রান্তিক গ্রামে বাঁশঝাড়ে ঘেরা গোরস্থান নিয়ে দেদার সব ঘটনা। সকালে উঠে গ্রামের মানুষ প্রায়ই দেখছেন খোঁড়া কবর থেকে লোপাট হয়ে গিয়েছে দেহটাই। গত কয়েক দিনে বার কয়েক এমন ঘটনায় ভয়টয় ছমছমে গুজব ভুলে দস্তুরহাটের মানুষ এখন রীতিমতো রাত-প্রহরা বসিয়েছেন গোরস্থানের দুয়ারে।

এক-আধটা নয়, গ্রামবাসীদের দাবি, গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি দেহ এ বাবেই লোপাট হয়ে গিয়েছে কবরখানা থেকে। পিছনে কারা? না, তা স্পষ্ট হয়নি। তবে গোরস্থান কাণ্ডের কথা জানানো হয় পুলিশকে। গুরুত্ব বুঝে কবরখানায় বার কয়েক ঘুরে গিয়েছেন ওসি, জামালুদ্দিন মণ্ডল। চলেছে রাতের টহলদারিও।

সাগরদিঘির গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের দস্তুরহাট ব্লকের সবচেয়ে বড় বসত। হাজার বারো মানুষের বাস। পিছিয়ে থাকা গ্রামটায় কোল ঘেঁষেই মণিগ্রাম- আজিমগঞ্জ গ্রামীণ সড়কের পাশেই ১৬ বিঘার গোরস্থান।

পাশের গ্রাম গয়েশাবাদ থেকেও দেহ নিয়ে আসা হয় এই গোরস্থানেই। কবরস্থানের এক দিক সামান্য উঁচু পাঁচিল। জায়গায় জায়গায় তা ধসেও গিয়েছে। বাকি তিনদিক খান কয়েক বাঁশঝাড়ের অপটু বেড়া।

গ্রামবাসী নফরউদ্দিন বলছেন, ‘‘কোনও কালেই তো নজরদারি ছিল না। ওই আগাছার জঙ্গলে যাবে কে!’’

সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে দুষ্কৃতীরা। গোরস্থানের কবর থেকে দেহ তুলে লোপাট করা শুরু করেছে তারা বলে গ্রামীণ মানুষের অভিযোগ।

ব্যাপারটা নজরে আসে ভোটের আগের দিন, ২১ এপ্রিল। গোরস্থান কমিটির সদস্য মাক্তার আলি বলেন, “গ্রামের এজেখা বিবিকে (৫৫) দু’দিন আগেই মাটি দেওয়া হয়েছিল। ২০ এপ্রিল সকালে দেখা যায় কাফনের কাপড়টি মাটির উপরে পড়ে রয়েছে। দেহটা নেই।” এ বার আগাছার জঙ্গল সরিয়ে খোঁজ পড়তেই দেখা যায় আশপাশের বেশ কয়েকটা কবরেও একই ভাবে খোঁড়া। ঝোপঝাড়ের আড়ালে এত দিন তা চোখেই পড়েনি। তাঁদের অনুমান, অন্তত ১২টি দেহ এই ভাবে লোপাট করা হয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, “নিয়ম মতো কবর খুঁড়ে কাফনে দেহ ঢেকে বাঁশের খাঁচার মধ্যে মৃতদেহটি সযন্তে রেখে মাটি চাপা দেওয়া হয়। যারা দেহ লোপাট করছে তারা মাটি খুঁড়ে পা ধরে টেনে অতি সহজেই দেহটি বের করে নিচ্ছে।”

গ্রামবাসীদের দু’এক জন জানাচ্ছেন, কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে রাতে মাটি কাটার আওয়াজ পেয়েছেন তাঁরা। তবে ভয়ে আর খোঁজ নিতে যাননি। গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘গোরস্থানটি জঙ্গলে ঢাকা হলেও কোনও জন্তুর পক্ষে মাটির তলা থেকে এমন নিপুণ ভাবে দেহ বের করা সম্ভব নয়। এর পিছনে কোনও চক্র রয়েছে।’’ গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফরওয়ার্ড ব্লকের অসিফুর রহমান বলেন, “সচক্ষে দেখে এসেছি। সব কিছু। এ ভাবে দেহ গায়েব হওয়ার ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। প্রতি দিন ১০ জন করে রাত জেগে তাই পাহারা দিচ্ছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Graveyard Deceased body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE