রানাঘাটের এই শোরুমে ডাকাতি হয় (বাঁ দিকে)। পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদলের গুলির লড়াই (ডান দিকে)।— নিজস্ব চিত্র।
২০ মিনিটের পূর্বপরিকল্পিত নিখুঁত ‘অপারেশন’ ছিল। যদিও শেষ মুহূর্তে পুলিশের সক্রিয়তার কাছে হার মানতে হল ডাকাতের দলকে। অপেক্ষাকৃত পুরনো আদ্দিকালের পিস্তলের কাছেই জব্দ হল অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। নদিয়ার রানাঘাটে একটি সংস্থার সোনার শোরুমে ডাকাতির পর পুলিশ এবং ডাকাতদলের গুলির লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে দুই ডাকাত। পুলিশ ধাওয়া করে আরও দুই ডাকাতকে পাকড়াও করেছে। পাশাপাশি আহত এবং ধৃতদের তল্লাশি করে উদ্ধার হয়েছে অন্তত ১ কোটি টাকার গয়না, বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা। মঙ্গলবার সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক করে এমনই তথ্য দিলেন মুর্শিদাবাদ ডিভিশনের ডিআইজি রশিদ মুনিন। পাশাপাশি, ধৃত এবং আহতদের কাছ থেকে মিলেছে ২২ রাউন্ড গুলি, চারটি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, একাধিক ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আধার কার্ড। বাজেয়াপ্ত হয়েছে দুটি মোটরবাইক।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় একই সময়ে নদিয়ার রানাঘাট এবং পুরুলিয়া শহরে একই সংস্থার দুটি গয়নার শোরুমে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পুরুলিয়ায় কোটি কোটি টাকার গয়না লুটের অভিযোগ উঠেছে। রানাঘাটের সংশ্লিষ্ট সংস্থার গয়নার শোরুম থেকেও ৯০ শতাংশ সোনার এবং হিরের গয়না নিয়ে পালায় ৭ জনের একটি ডাকাতদল। তবে রানাঘাটে শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশ পিছু নেয় ডাকাতদের। চলে গুলির লড়াই। তাতে মোট চার জন ডাকাতকে ধরে ফেলে পুলিশ। উদ্ধার হয় একটি গয়নাভর্তি ব্যাগও।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুর্শিদাবাদ ডিভিশনের ডিআইজি। তিনি জানান, বেলা ৩টে ৫ মিনিটে রানাঘাট চাবি গেট এলাকার স্বর্ণ বিপণীতে সাত জনের একটি ডাকার দল প্রবেশ করে। প্রথমে তারা নিরস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীর কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। সিসিটিভির মনিটরের কাছে থাকা এক সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী ৩টে ১০ মিনিট নাগাদ রানাঘাট থানার আইসিকে ফোন করে ওই ঘটনার কথা জানান। তার ৫ মিনিটের মধ্যে চার এএসআই-এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চটজলদি লুট করে শোরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে ওই ডাকাতদল। পুলিশের মুখোমুখি হতেই তাদের দিকে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে তারা। পাল্টা পুলিশও গুলি চালায়। ডাকাতদলটিকে ধাওয়া করতে করতে এগিয়ে যায় পুলিশ। ডাকাতদের পা লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়।
পুলিশের তরফে মোট চার রাউন্ড এবং ডাকাতদল মোট আট রাউন্ড গুলি চালায় বলে জানিয়েছেন ডিআইজি। ওই গুলির লড়াইয়ে ডাকাতদলের দুই সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়। তার পর তাদের ধাওয়া করে সহজেই ধরে ফেলে পুলিশ। তাদের তল্লাশি করে প্রায় কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, গাড়ির একাধিক ভুয়ো নম্বর প্লেট, ২২ রাউন্ড গুলি ইত্যাদি করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ধৃতদের কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে পুলিশের ধারণা, এক সপ্তাহ আগে থেকে ডাকাতির পরিকল্পনা করে ওই দলটি। বিহার থেকে ৮ সদস্যের ডাকাতদলের এক সদস্য কয়েকদিন আগে ঘটনাস্থল রেইকি করে।
এর পর মঙ্গলবার সকালেই তারা বিহার থেকে হাওড়া পৌঁছয় ট্রেনে। সেখান থেকে আসে কল্যাণী রেলস্টেশনে। তার পর দুটি দলে ভাগ হয়ে রানাঘাটে প্রবেশ করে তারা। ডাকাতদলের ধৃত সদস্যদের তিন জন বৈশালী এবং একজন ছপড়া জেলার বাসিন্দা বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। ডিআইজি বলেন, ‘‘ডাকাত দলের বাকি সদস্যদের ধরার জন্য আশপাশের সমস্ত জেলাকে সতর্ক করা হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় অতিরিক্ত নাকা পয়েন্ট বসানো হয়েছে। রেলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy