Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
রসিকদের ভরসা পমফ্রেট-ভেটকি

মাঝ আষাঢ়ে ইলিশ বুঝি আর আসে না

পরিস্থিতি এতই সঙ্গিন যে, বিয়ে বাড়ির পূর্ব নির্ধারিত মেনু থেকে ইলিশের পদ বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন ক্যাটারিং সংস্থার মালিকেরা। নিমন্ত্রণকর্তা বাধ্য হয়ে তা মেনেও নিচ্ছেন। পমফ্রেট, ভেটকিতে কাজ সারতে হচ্ছে।  কিন্তু তাতে কৌলীন্য হারাচ্ছে ভোজবাড়ির পাত।

বাজারে এমন ইলিশ আসবে কবে? নিজস্ব চিত্র

বাজারে এমন ইলিশ আসবে কবে? নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০৭:২০
Share: Save:

আশার মাস আষাঢ়! পদ্মাপাড়ের মানুষ মাত্রেই জানেন এ আশা ইলিশের। কিন্তু এ বার মুখ ফিরিয়েছে ইলিশ। মাঝ আষাঢ়েও বাজারে ইলিশ অমিল। বাঙালির বর্ষা ইলিশ বিহনে বিফলে যায় বুঝি।

পরিস্থিতি এতই সঙ্গিন যে, বিয়ে বাড়ির পূর্ব নির্ধারিত মেনু থেকে ইলিশের পদ বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন ক্যাটারিং সংস্থার মালিকেরা। নিমন্ত্রণকর্তা বাধ্য হয়ে তা মেনেও নিচ্ছেন। পমফ্রেট, ভেটকিতে কাজ সারতে হচ্ছে। কিন্তু তাতে কৌলীন্য হারাচ্ছে ভোজবাড়ির পাত।

বড় সাধ ছিল ছেলের বিয়েতে ইলিশ খাওয়াবেন নিমন্ত্রিতদের। আষাঢ় মাস অথচ ভোজের পাতে ইলিশ থাকবে না, এ আবার হয় নাকি! তাই মাস তিনেক আগে ছেলের বিয়ের মেনু ঠিক করার সময় ‘সরষে ইলিশ’ তালিকায় রেখেছিলেন নবদ্বীপের দ্বিজেন ভুঁইয়া। সেই মতো প্রতি প্লেটের দামও ঠিক হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রবিবার ছেলের বউভাতের মেনু থেকে ইলিশ বাতিল করতে হল তাঁকে। দ্বিজেন বলেন, “ভোজবাড়িতে যে ধরনের দরকার সেই ইলিশ বাজারে অমিল। অল্প কিছু ইলিশ যা পাওয়া যাচ্ছে তার ওজন পাঁচশো গ্রামের আশেপাশে। ফলে বাতিল করতে হল ইলিশের পদ।”

অন্য দিকে, ক্যাটারিং মালিক নিতাই বসাক জানাচ্ছেন, “জুনের মাঝামাঝি থেকেই ইলিশের জোগান স্বাভাবিক হয়ে যায়। আষাঢ় মাসে ভোজবাড়ির কাজে ইলিশের পদ অর্ডার নিতে কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু এ বারই প্রথম বাজারে মাছ নেই বলে অর্ডারের মেনু বদলাতে হল।’’

আর এক ক্যাটারিং মালিক শান্তনু ভৌমিক বলেন, “এখন ইলিশ খাওয়াতে গেলে প্লেট পিছু কত করে পড়বে তা আগে থেকে বলতে পারবো না। কাজের দিন যে দামে ইলিশ কিনব, সেই মতো দাম ঠিক হবে। এতে বেশির ভাগ লোকই রাজি হচ্ছেন না। কিন্তু আমি নিরুপায়।”

কিন্তু কেন এমন হাল ইলিশের এ বার?

উত্তরে মৎস্যবিজ্ঞানী দেবজ্যোতি চক্রবর্তী জানান, এই ইলিশ সঙ্কটের পিছনে রয়েছে অনেক কারণ। ইলিশ মাছ সাধারণ ভাবে ডিম পাড়তে সাগর থেকে নদীতে আসে এবং ফের সাগরে ফিরে যায়। কিন্তু ইদানীং ইলিশ ডিম পাড়ার পর নদী থেকে সাগরে ফিরছে না। ফলে বর্ষার শুরুতে সাগর থেকে ঝাঁক বেঁধে নদীতে আসা ইলিশের দল আর ধরা পড়ছে না জালে।

নদী এবং মাছ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন সূর্যেন্দু দে। তিনি মনে করেন, ইলিশের প্রাকৃতিক প্রজননের শর্তগুলো চরম অবহেলা করা হচ্ছে। প্রজনন ক্ষেত্র হারিয়ে যাচ্ছে। মাছধরার সময় সীমা কেউ মানছেন না। সেই কারণেই মিলছে না পর্যাপ্ত ইলিশ। না হলে জামাইষষ্ঠী হল ইলিশ খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

কিন্তু জ্যৈষ্ঠ পার হয়ে আষাঢ়ের মাঝামাঝি। ইলিশ কোথায়?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE