সুনসান সীমান্তে পায়চারি করছে জলঙ্গির এক যুবক। কানে ফোন, বুকপকেট উঁকি দিচ্ছে একটা নোটবুক। খানিক দূরে বিএসএফ ক্যাম্প। ওই যুবক বলে চলেছে, ‘‘আরে ছি, ছি ভাই। এ ভাবে লজ্জা দেবেন না। আপনাদের সঙ্গে কি আমাদের আজকের সম্পর্ক! জিনিস ঠিক পৌঁছে যাবে। টাকা যখন খুশি দিন। কোনও অসুবিধা নেই।’’
সত্যিই কি অসুবিধা নেই?
এ বার ম্লান হাসে ওই যুবক, ‘‘খুব আছে! টাকা না দিলে আমাদের কিস্যু করার নেই। তবুও নগদের এই নেই নেই বাজারে কারবার চালাতে গেলে বিশ্বাস করা ছাড়া উপায়ও নেই।’’ অর্থাৎ, চোরাকারবারে ফের ভরসা রাখতে হচ্ছে সেই বিশ্বাসেই। অতীতে যে বিশ্বাসের মাসুল দিতে হয়েছে দু’দেশের বহু পাচারকারীকে।
পাচার সামগ্রী চলে গিয়ে ও পারে। কিন্তু টাকা আসেনি। আবার উল্টোটাও হয়েছে। নিঃস্ব হয়ে কারবার থেকেই সরে যেতে হয়েছে অনেককে। তার বদলা নিতে সীমান্তে এক সময় খুন, জখমও বড় কম হয়নি।
গেদে সীমান্তের এক পাচারকারীর কথায়, ‘‘কোটি কোটি টাকা বকেয়া থেকেছে ওপারে। তখন এ কারবারে ইমানই ছিল শেষ কথা। বাংলাদেশের কারবারিরা মাসের শেষে এসে পুরো টাকা কড়ায়-গণ্ডায় মিটিয়ে দিয়েছে। আমরাও কখনও কথার খেলাপ করিনি।’’
কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে গণ্ডগোল শুরু হল। কারবারে ঢুকে পড়ল নতুন মুখ। কয়েক জনের জন্য এতদিনের বিশ্বাস ভেঙে গেল। ধারে কারবার বন্ধ হয়ে গেল। ফলে, গত কয়েক বছরে পাচারকারীদেরও মুখে মুখে ঘুরছিল সেই চেনা লাইন, ‘ধার চেয়ে লজ্জা দেবেন না।’ নোটের নাচনে লজ্জা-ভয় সব শিকেয় তুলে এখন সোনার পাশাপাশি ধারেও চলছে কারবার।
সেই ধারের হিসেব লেখা থাকছে নোটবুকে। ক্রেতাদের নামের জায়গায় রংবেরঙের কালিতে আঁকা রয়েছে জবা, কোকিল কিংবা ফড়িং-এর ছবি। আর পাচার সামগ্রীর তালিকায় লেখা পেপসি, বোল্ডার, হাতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy