ফাইল চিত্র
আমরা সাত ভাই আর এক বোন। বাবা মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। ভাইরা সকলেই পৃথক হয়ে গিয়েছে। আমার ও পরের দুই ভাইয়ের বিয়ে হয়নি। বাবার রেখে যাওয়া তেরো বিঘা জমির থেকে আমি পেয়েছি মাত্র দেড় বিঘা জমি। ওই জমিতে চাষ করে সারা বছর খাবারের জোগান হয় না। ফরাক্কা ও সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করেছি। তখনও নিজের উদ্যোগে ওই কেন্দ্রের পাইপ লাইনের কাজ শিখেছিলাম। সেটাকে কাজে লাগিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ পেয়েছিলাম। বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে মাসে ২৩ হাজার টাকা বেতন। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে কাজে যোগ দিয়েছিলাম, আর লকডাউন শুরু হয় মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে। ওই একমাস কাজ করে ছিলাম। বেতন পেয়েছিলাম।
লকডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেতন না দিলেও আমাদের সংস্থা থেকে সপ্তাহে পাঁচশো টাকা খাওয়ার দেওয়া হত। কিন্তু বেতন নেই মাসের পর মাস বসে আছি। খাওয়ার খরচ ছাড়াও নিজের অন্য খরচও থাকে। ওই এক মাসের বেতনের অর্ধেক খরচ হয়ে যায়।
বেতন পাওয়ার পরে বাড়িতে টাকা পাঠাইনি, সেটা আমাকে রক্ষা করেছে। আমাদের সংস্থা থেকে বাড়ি আসতেও দিচ্ছিল না। কাজ শুরু হবে বলেই মাস খানেক বসিয়ে রাখে। বাড়ি ফেরার জন্য আকুল হয়ে উঠেছিলাম। আমরা যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক ছিলাম ট্রেন চেয়ে সকলে মিলে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু জানতে পারি, আমাদের রাজ্য সরকার ট্রেন না চাওয়ার কারণে আমরা ট্রেন পাচ্ছি না। শোনার পর ভেঙে পড়েছিলাম। ওই দিন আমাদের রাজ্যের এমন কয়েক জনের সঙ্গে পরিচয় হয় যারা বাড়ি ফিরতে চায়। ৪৫ জন রাজি হয় বাড়ি ফেরার জন্য। শেষে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ট্রাক ভাড়া করি। প্রত্যেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তিন ধরে ট্রাকে আসার পর বাড়ি পেয়েছি। তবে ট্রেকে যাতায়াত করা যে কী কষ্টের সেটা লকডাউন না হলে বোধহয় জানতে পারতাম না। শুকনো খাবার বলতে চিঁড়ে, চিনি আর শুকনো দুধ খেয়েই কাটিয়েছি।
তিন দিন আসার সময় নিজেদের শুকনো খাবার যা ছিল তার পরেও অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তায় শুকনো খাবার দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের রাজ্যে যখন আসি তারপর থেকে কোথাও খাবার দেওয়া হয়নি। তখন মনে হয়েছে আমাদের জন্য ভিন্ রাজ্যই ভাল। নিজের রাজ্য আমাদের জন্য কিছু করে না। বাড়ি থেকে মা ফোন করলে মিথ্যা করে বলতে হয়েছে, আমরা ভালো আছি সুস্থ আছি। মা কান্না কাটি করতে শুরু করে। তখন আর নিজেকেও ধরে রাখতে পারিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy