প্রতীকী ছবি।
ভোটের উত্তাপের পারদ যত বাড়ছে, ততই যেন একটু একটু করে পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ঢুকে পড়েছিল পঞ্জাব, দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মুম্বই, বেঙ্গালুরু, পুণের মতো শহরগুলিতে। ওই সব রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ফের বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল যাত্রীদের কোভিড টেস্ট। ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে বিমান চলাচলও। এবার এই রাজ্য তথা জেলাগুলিতেও নতুন করে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। যা বিধানসভা নির্বাচনের মুখে নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের।
স্বাস্থ্য দফতরের গত কয়েক দিনের করোনা বুলেটিনে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বিষয়টু। দৈনিক কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা শূন্যয় নেমে আসার পরেও আবার নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে করোনার নতুন স্ট্রেনের সংখ্যাও। সারা দেশে চারশোরও বেশি রোগীর শরীরে ব্রাজিল, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকার করোনার স্ট্রেন মিলেছে নতুন ভাবে। যা থেকে জেলায় ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এমতাবস্থায় করোনা নিয়ে আবার নতুন করে প্রশাসনিক কর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, যে ভাবে ভোটের প্রচার থেকে শুরু করে সভা-সমিতিতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে, তাতে আগামী দিনে পরিস্থিতি আবারও খারাপ হতে চলেছে।
তাঁদের দাবি, এখন এই ভোটের বাজারে কোনও মতেই করোনা-বিধি যথাযত ভাবে মেনে চলবেন না প্রায় কেউ-ই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি আবার কমতে শুরু করেছে। মাস্ক পরা বন্ধ করে দিয়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। পারস্পরিক দূরত্বর কথা এখন প্রায় কারওরই মাথায় নেই। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হতে চলেছে। ফলে, আগামী দিনে সংক্রমিতের সংখ্যা যে বাড়তে থাকবে সেটা মেনে নিচ্ছেন অনেক স্বাস্থ্য কর্তাই। একটা সময়ে জেলায় দৈনিক সংক্রমনের সংখ্যা দুশোর বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে কার্যত কালঘাম ছোটার মতো অবস্থা হয়েছিল জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের। একের পর এক কোভিড হাসপাতাল ও আইসোলেশন ওয়ার্ড বেড়েই যাচ্ছিল। সেই সঙ্গে বাড়ছিল করোনা আক্রমণে মৃতের সংখ্যাও।
কিন্তু গত মাস থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে। দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয় অনেকটাই। দু’ ধরনের পরীক্ষা মিলিয়ে প্রায় ১৭০০ থেকে ১৮০০, শুরু হয় র্যান্ডাম পরীক্ষা। সব মিলিয়ে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা কমতে কমতে একটা সময় শূন্যতে নেমে আসে। প্রয়োজন না থাকায় বন্ধ করে দেওয়া হতে থাকে কোভিড হাসপাতালগুলিকে। তাতেই কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশি দিন স্থায়ী হল না। আবারও নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। শুক্রবারই জেলায় নতুন করে ৭ জন সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছে। আগামী দিনে এই সংখ্যাটা আবারও ধাপে ধাপে বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
যদিও কেউ কেউ বলছেন যে, পরীক্ষা আগের থেকে কম হওয়ার কারণে সংক্রমিতের সংখ্যাও কমছে। ভোটের কাজে সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় করোনার উপরে কর্তাদের নজর নেই আর। সেই সুযোগে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল পরীক্ষা। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তার। তাঁদের কথায়, এখন জ্বরের প্রকোপ থাকে না। সে ভাবে সাধারণ জ্বর বা সর্দি-কাশির উপসর্গযুক্ত রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় পরীক্ষার প্রয়োজন হচ্ছে না। পাশাপাশি, এমনতেই এখন সংক্রমিত কম। ফলে, সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসার জন্যও তেমন কাউকে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে না। পাশাপাশি, এটাও সত্যি যে স্বেচ্ছায় তেমন ভাবে কেউই পরীক্ষা করাতে আসছেন না। ফলে সব রকম ভাবে প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষার সংখ্যাও কমছে।
তবে এরই মধ্যে নতুন স্ট্রেন ভাবাতে শুরু করেছে কর্তাদের। কারণ এরই মধ্যে জেলায় চার জনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যাঁদের নমুনায় করোনার নতুন স্ট্রেনের সন্ধান মিলেছে। করিমপুর এলাকায় এক বিয়েবাড়িতে নতুন স্ট্রেন-সমেত এক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মেলায় রীতিমত হইচই পড়ে গিয়েছিল। এর পাশাপাশি, রানাঘাট ১ ব্লকে দু’জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে, যাঁদের শরীরে নতুন স্ট্রেনের সন্ধান মিলেছে। হরিণঘাটা ব্লক এলাকাতে মহারাষ্ট্র থেকে কাজে আসা এক ব্যক্তির শরীরে নতুন স্ট্রেনের সন্ধান মিলেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
যাঁরা বিমানে রাজ্যে আসছেন, তাঁদের পরীক্ষা এয়ারপোর্ট থেকেই হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যাঁরা ভিন্ রাজ্য থেকে বাসে বা ট্রেনে করে আসছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে কী করে?
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির সমীক্ষা চলছে। পাশাপাশি, আশাকর্মীরা নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর করছেন। হরিণঘাটার ঘটনা তাঁরাই প্রথম জানতে পারেন।
এই অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্তারা আবার নতুন করে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহারের পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে বলছেন পারস্পরিক দূরত্ব রক্ষায়। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘মহারাষ্ট্রের করোনা স্ট্রেন অনেক দ্রুততার সঙ্গে সংক্রমিত হয়। তাই বিপদটাও বেশি।’’
অন্য দিকে ভোটের প্রচার নিয়ে নেতাদের পরামর্শ, ‘‘ভোট করুন। কিন্তু নিজেকে ও পরিবারকে করোনার হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy