নিজস্ব চিত্র
কলেজের ১৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস ইতিমধ্যে পালন করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের সেই প্রতিষ্ঠা দিবস নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের অনেকেই এ নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন।
গত ২৭ ও ২৮ নভেম্বর কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে অনুষ্ঠিত হয় কলেজের প্রতিষ্ঠা দবস। কিন্তু প্রাক্তন ছাত্রদের অভিযোগ, ইতিহাসকে কার্যত উপেক্ষা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ খেয়ালখুশি মতো প্রতিষ্ঠা দিবস ঠিক করে নিয়ে তা পালন করছে। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই দাবি মানতে নারাজ।
ঘটনা হল, কলেজের মূল ভবনের গায়ে লেখা রয়েছে, ১৮৪৬ সালে সেটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৮৪৫ সালের ২৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা দিবস ধরে সেই মতো নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। তাঁদের দাবি, ওই দিন কলেজর প্রথম অধ্যক্ষ ডি এল রিচার্ডসন দায়িত্বভার নিয়েছিলেন। সেই কারণেই দিনটিকে প্রতিষ্ঠা দিবস বলে গ্রহণ করা হয়েছে।
যদিও কৃষ্ণনাগরিকদের একাংশের দাবি, ১৮৪৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কলেজের পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল। ফলে, সেটাই প্রতিষ্ঠা দিবস বলে গণ্য হয়া উচিত। কলেজের মূল ভবনের মাথায় সেই সালটাই লেখা আছে। শুধু তা-ই নয়, সেটিকে প্রতিষ্ঠা বর্ষ ধরে কলেজের শতবর্ষ ও সার্ধ-শতবর্ষ পালিত হয়েছে। কলেজ প্রতিষ্ঠা সংক্রন্ত সমস্ত নথিপত্রেও ১৮৪৬ সালের ১ জানুয়ারিকে প্রতিষ্ঠা দিবস বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাক্তনীদের অনেকেরই বক্তব্য সাজিয়ে দেন প্রাক্তন ছাত্র প্রবীর বসু — নথি অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ১৮৪৫ সালের ১ অক্টোবর সরকারের তরফে কলেজ প্রতিষ্ঠার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় ছাত্র ভর্তি। ২৮ নভেম্বর প্রথম অধ্যক্ষকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। ১৮৪৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়। তা হলে কেন সরকারি নির্দেশিকা জারির দিন বা প্রথম ছাত্র ভর্তির দিনটিকে প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে গ্রহণ করা হবে না? কেন ক্লাস শুরুর দিনটিকেও প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে গ্রহণ করা হবে না? এত তারিখ থাকতে কেন বা অধ্যক্ষের নিয়োগ তারিখকেই প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাব ধরা হল, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। প্রবীর বলেন, “কোন যুক্তিতে সব নথিপত্র উপেক্ষা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তা জানতে চেয়ে একটা চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু তার উত্তর পাইনি।”
১৯৭৩ সালে ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন স্বদেশ রায়। তাঁর কথায়, “যে কোনও কিছু প্রতিষ্ঠার পিছনে একটা প্রক্রিয়া থাকে। অধ্যক্ষকে নিয়োগপত্র দেওয়া তেমনই একটা প্রক্রিয়া। তা বলে সেটা কখনও প্রতিষ্ঠা দিবস হতে পারে না।” তাঁর কটাক্ষ, “১৮৪৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা ধরে শতবর্ষ বা সার্ধ-শতবর্ষ পালিত হয়েছে। সেগুলো কি ভুল ছিল? তা হলে কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত ভবনের মাথায় যে সাল লেখা রয়েছে, সেটা মুছে দেওয়া।” সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে প্রতিবাদ চলছে।
যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ এ সব কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ। কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শোভন নিয়োগী বলেন, “আমাদের শিক্ষকেরা অনেক নথিপত্র ঘেঁটে, পড়াশোনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক জন অধ্যক্ষ নিয়োগ হচ্ছে। তিনি তো আর কোনও চায়ের দোকানে নিয়োগ হচ্ছেন না। তার মানে সেটাই প্রতিষ্ঠা দিবস। সেই অনুযায়ীই আমরা ১৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেছি। এর মধ্যে ভুল রয়েছে বলে আমরা মনে করছি না।” সে ক্ষেত্রে, ১৯৮৬ ধরে শতবর্ষ ও সার্ধ-শতবর্ষ পালন ঠিক হয়েছিল কি না, সে প্রশ্নের সদুত্তর ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy