পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের ‘জমি ক্রয়’ কাণ্ড নিয়ে পঞ্চায়েতেরই একাংশের তৃণমূল সদস্যেরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নদিয়া জেলাশাসক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই সেই কমিটি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। সূত্রের খবর, সেই তদন্তেও উঠে এসেছে পঞ্চায়েত আইন না মানা ও অনিয়মের বিষয়টি।
প্রসঙ্গত, সপ্তাহখানেক আগে জেলাশাসকের নির্দেশে রানাঘাট মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর অনির্বাণ বসু, রানাঘাট-১ বিএলআরও অজয়কুমার বিশ্বাস ও পঞ্চায়েত অডিট এবং অ্যাকাউন্টস অফিসার (কৃষ্ণনগর) প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কমিটিতে থাকা ওই তিন সদস্য ইতিমধ্যেই পায়রাডাঙা পঞ্চায়েতের গিয়ে শ্মশান তৈরির জন্য পঞ্চায়েতের জমি কেনার বিষয়টি তদন্ত করেন। আবার ওই কমিটির কাছে ওই দিনও লিখিত অভিযোগ জানান পঞ্চায়েতের একাংশ সদস্যেরা।
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৭ লক্ষ টাকায় কেনা হয়েছে প্রায় ৭০.৫ শতক জমি। গত ১৫ জানুয়ারি পঞ্চায়েতের তরফে ওই জমি কেনা হয়। পঞ্চায়েতের তৃণমূলের একাংশের সদস্যদের অভিযোগ, তাঁদের অন্ধকারে রেখে জমি কেনা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, বাজার মুল্য থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি দামে অর্থাৎ সাত লক্ষ টাকার জমি পঞ্চায়েত ৩৭ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছে বলেও অভিযোগ। জমির মালিক রানাঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা পদাধিকার বলে পঞ্চায়েতের শিল্প, পরিকাঠামোর সঞ্চালক কংগ্রেসের বিজয়েন্দু বিশ্বাস। অন্য দিকে, পঞ্চায়েত আইনের ৮ (সি) ধারা মতে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যর কাছ থেকে জমি কেনার বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি।
তাছাড়া পঞ্চায়েত আইন বলছে, উন্নয়নের স্বার্থে জমির প্রয়োজন হলে পঞ্চায়েত তা সরাসরি কখনই নিজে কিনতে পারে না। এ ক্ষেত্রে প্রথমে আবেদন জমা পড়বে জেলাশাসকের কাছে। তার পরে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজন হলে জমি অধিগ্রহণ করে পঞ্চায়েতকে দেবেন। এ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি।
গত সোমবার সকালে জমি কেনার বিষয়টি নিয়ে পায়রাডাঙার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার পড়েছিল। তাতেও পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল তছরুপ হয়েছে বলেও উল্লেখ ছিল। এ ছাড়াও পোস্টারে লেখা হয়, পঞ্চায়েত প্রধান ফাল্গুনী বিশ্বাস ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিজয়েন্দু বিশ্বাসের শাস্তি চাই। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পঞ্চায়েত আইন লঙ্ঘিত হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু অনিয়ম যে হয়েছে তাও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ওই রিপোর্টে। তদন্ত প্রসঙ্গে রানাঘাট মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরেট অনির্বাণ বসু বুধবার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের জমি কেনার ক্ষেত্রে একাধিক অনিয়মের ঘটনা নজরে এসেছে। তবে তদন্ত চলছে। এর চেয়ে বেশি কিছু এখন বলা সম্ভব নয়। সময় মত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)