হাল্কা মেজাজে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অজয় দে ও অরিন্দম ভট্টাচার্য। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
আপন মনে গুনগুন করছেন। গানের তালে টেবিলে দিব্যি তাল ঠুকছেন।
ভোটের পরে তো বেশ খোশমেজাজে গান-বাজনা চলছে। টেনশন হচ্ছে না? প্রশ্নটা শুনে হাসছেন শান্তিপুরের তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে, ‘‘টেনশন করব কেন! মানুষ আমার সঙ্গে আছে।’’
ভোট মিটে গিয়েছে ২১ এপ্রিল। কিন্তু অজয়বাবুর দৈনন্দিন রুটিনের তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। সকাল থেকেই বাড়িতে লোকজন আসছেন। তাঁদের অভাব-অভিযোগ-অনুযোগ শুনে এগারোটা নাগাদ স্নান-খাওয়া। তারপর সোজা পুরসভা। সেখানে কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফিরতে বেলা কাবার হয়ে যায় সাত বারের পুরপ্রধান অজয়বাবুর।
শুক্রবার সকালেও তার অন্যথা হয়নি। দোতলা থেকে নেমে নীচের ঘরে বসেছিলেন অজয়বাবু। পরনে সুতির লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি। এক কাউন্সিলরের ছেলে এসে কথা বলে গেলেন তাঁদের এলাকার সমস্যা নিয়ে। ঘরের ভিতরে ছোট রঙিন টিভি। খবরের চ্যানেল খোলা আছে বটে। কিন্তু সে দিকে কারও মন আছে বলে মনে হল না।
অজয়বাবুর এক অনুগামী জানতে চাইলেন, ‘‘দাদা, জেলায় কী হবে মনে হচ্ছে?’’ কথা শেষ না হতেই অজয়বাবুর জবাব, ‘‘মিডিয়া যাই বলুক না কেন, জেলায় আমাদের ফল ভালই হবে। ১৯ মে মিলিয়ে নিস।’’ আর আপনার নিজের কেন্দ্রে? অনুগামীদের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে অজয়বাবু বলছেন, ‘‘জয়ের ব্যাপারে একশো ভাগ নিশ্চিত। মানুষ এ বারেও আমাকে ঢেলে আশির্বাদ করেছে।’’
ভোট মিটে যাওয়ার পরেও অজয়বাবু বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তাঁদের কাছ থেকে রিপোর্ট নিচ্ছেন। ভোট মিটে যাওয়ার পরেও এত ব্যস্ততা? ‘‘কর্মীরা ডাকলে না গিয়ে থাকা যায়?’’ বলছেন অজয়বাবু। শান্তিপুর বলছে, ২০০৬ সালের পরে ফের অজয় দে কঠিন লড়াইয়ের মুখে। ভোটের দিন তাঁর চোখেমুখেও সে উদ্বেগ ধরা পড়েছে। তবে এখন তিনি অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে। কর্মীদের কথায়, ‘‘দাদা পোড়খাওয়া লোক। ভোটের পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর নিয়ে দাদা ক্রমশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন।’’
জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী শান্তিপুরের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের অরিন্দম ভট্টাচার্যও। ভোটের পরে শুধু একদিনের জন্য তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। তারপর থেকে শান্তিপুরেই। সকাল থেকে তাঁর ভাড়া বাড়ির সামনে ভিড় করছেন সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীরা। শুক্রবার তাঁর
সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন সিপিএমের শান্তিপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক অনুপ ঘোষ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে আলোচনা সেরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অনুপবাবু অনুপবাবু বলে যান, ‘‘আমি পার্টি অফিস যাচ্ছি। তুমি দেরি কোরো না। ওখানেও যেতে হবে কিন্তু।’’
ইশারা বুঝে যান কংগ্রেস প্রার্থী। যিনি নাকি উড়ে এসে শান্তিপুরের মানুষের হৃদয়ে অনেকটাই জুড়ে বসেছেন। যাঁকে সামনে রেখে জোটকর্মীরা ‘অজয় মিথ’ ভেঙে ফের জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। সকাল সাড়ে এগারোটা। বাইরে তখন আগুন-রোদ। সকালের খাবার তখনও পেটে পড়েনি। এক কর্মী এগিয়ে দিলেন প্লেট—কচুড়ি আর দু’টো রসগোল্লা। খেতে খেতেই কর্মীদের সমস্যার কথা শুনছেন তিনি। কারও আব্দার— ‘দাদা, রেলের বিরুদ্ধে মামলার তদারকিটা আপনাকেই করতে হবে।’ কারও অভিযোগ, ‘দাদা, পুলিশ আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে।’ কেউ বলছেন, ‘পুলিশ কিন্তু হেব্বি ঘোরাচ্ছে দাদা। আমাদের কেসটা একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ভোটের আগে অরিন্দমবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দিয়েছে শান্তিপুর থানার ওসিকে। তারপর থেকে কর্মীদের বিশ্বাস, ‘‘দাদা পুলিশকে বুঝিয়ে দিয়েছে কত ধানে কত চাল। পুলিশ বেচাল করলে দাদাও ছেড়ে কথা বলবে না।’’ শুনে মুচকি হাসছেন অরিন্দমবাবু। বলছেন, ‘‘মানুষ যদি আমাকে নির্বাচিত করে তাহলে এক সপ্তাহ ধরে আমি শুধু মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ সংগ্রহ করব। বিশ্বাস করুন, শান্তিপুরে সাধারণ মানুষ এতটুকু সুবিচার পান না। পুলিশ পুরোপুরি ওদের হয়ে কাজ করে।’’
কিন্তু মানুষ যদি আপনাকে না জেতায়? পরনে তখনও রাতের টি শার্ট আর পাজামা। খাওয়া শেষ।
কিঙ্গ সাইজ সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে অরিন্দমবাবু বলছেন, ‘‘আমি তো আমার মতো করে চেষ্টা করেছি। এ বার সিদ্ধান্ত নেবে মানুষ।
তবে জয়ের ব্যাপারে আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত।’’
তারপরেও যদি অন্য কিছু ঘটে যায়?
কিছুটা যেন উদাসীন হয়ে পড়েন অরিন্দমবাবু। একটু থেমে তিনি বলেন, ‘‘ফিরে যাব। মানুষ যদি আমাকে না চায় তাহলে তো আমি জোর করে থাকতে পারি না।’’
আনমনা সিগারেট পুড়তেই থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy