সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উদ্ধার করা সোনার বিস্কুট। নিজস্ব চিত্র
ভারতে সোনার চড়া দামে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সোনা পাচারের হিড়িক পড়েছে সীমান্ত পথে। ওই দেশে রবিবার ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল ৫৩,১৪৪ টাকার আশেপাশে। এ রাজ্যে এ দিন সোনার ১০ গ্রামের দাম ছিল ৬০,৪৫০ টাকা। বাড়তি টাকার লোভেই পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত পথে এ রাজ্যে সোনার পাচার বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাও আবার নানা কৌশলে। কেউ পায়ুদ্বারে সেলো টেপে সোনা এঁটে, কেউ লুঙ্গির খুঁটের মধ্যে সোনাকে ব্ল্যাকটেপ দিয়ে এঁটে নিয়ে আসছে বলে বিএসএফ সূত্রে খবর। এমনকি খেয়ে পেটের মধ্যে ঢুকিয়েও আনা হচ্ছে সোনা। কেউ বা মাছের গাড়ির মধ্যে লুকিয়ে, কেউ বা সীমান্তের বেড়ার ওপার থেকে ছুড়ে দিচ্ছে এপারে সোনার বাট ,তা কুড়িয়ে নিচ্ছে অন্যজন।
ইতিমধ্যেই অবশ্য সোনা পাচার রুখতে সীমান্ত এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে এ ব্যাপারে মোবাইল নম্বর ও অ্যাপের মাধ্যমে গোপন তথ্য চেয়ে প্রচার শুরু করেছে বিএসএফ।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের জনসংযোগ অধিকর্তা জানান, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তে বসবাসকারী লোকেদের বিএসএফের সীমা সাথী হেল্পলাইন নম্বর ১৪৪১৯-তে যোগাযোগ করে সোনা চোরাচালান সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত আরও একটি নম্বর ৯৯০৩৪৭২২২৭ চালু করেছে যাতে সোনা চোরাচালান সংক্রান্ত তথ্য হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা ভয়েস মেসেজ করে পাঠানো যায়। স
ঠিক তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে পুরস্কারের আশ্বাস দিয়ে তার পরিচয় গোপন রাখা হবে জানিয়েছে তাও।
তবে বিএসএফের মতে, প্রায় প্রতিদিনই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে ধরা পড়ছে এই সব পাচারের সোনা বিএসএফের হাতে। সে দেশ থেকে সোনা পাচার রুখতে তৎপর পার্শ্ববর্তী দেশ বর্ডার গার্ডও।সীমান্তে পার্শ্ববর্তী দেশ বর্ডার গার্ডের প্রকাশিত তথ্য মতো জানুয়ারি মাসেই তাদের হাতে পাচারের পথে ৩১.৬৩০ কিলোগ্রাম সোনা ধরা পড়েছে, যা রেকর্ড। এ রাজ্যে মূলত উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকা ছিল সোনা পাচারের মূল ঘাঁটি। এখন তা ছড়িয়েছে নদিয়া, মুর্শিদাবাদেও। আর মুর্শিদাবাদে বার বার বিএসএফের হাতে সোনা ধরা পড়েছে জঙ্গিপুরের সীমান্তে।গত ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যা রাতে সোনা পাচারের সময় বিএসএফের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় বাড়ির পাশেই একটি সর্ষে খেতের মধ্যে ছুড়ে ফেলে এক যুবক কাপড়ে বাঁধা সোনার বিস্কুটগুলি। সেখানে ঘণ্টা খানেক তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় ৪টি সোনার বিস্কুট, যার ওজন ৪৬৬.৭০ গ্রাম। দাম ২৬.১৩ লক্ষ টাকা।১৬ মার্চ বাহুরা সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানদের হাতে ধরা পড়ে ৫টি সোনার বিস্কুট। ৫৮৩.২ গ্রাম ওজনের ওই সোনার বিস্কুটের দাম প্রায় ৩৩.৫৭ লক্ষ টাকা বলে বিএসএফের দাবি। জঙ্গিপুরের বাহুরা সীমান্তে ১১৫ ব্যাটালিয়ানের জওয়ানরা এই সোনা সহ এক পাচারকারীকেও গ্রেফতার করে। সে মোটরবাইকে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সোনা নিয়ে পদ্মার চরের কাছাকাছি এ
লে তার সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখে জওয়ানরা তাকে থামিয়ে তল্লাশি চালায়। পাঁচটি সোনার বিস্কুট উদ্ধার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে চোরাকারবারী জানায়, যে সে সোনার বিস্কুটগুলি চাঁপাই নবাবগঞ্জের বাসিন্দা জহিরুল শেখের কাছ থেকে নিয়েছিল। এরপর এসব সোনার বিস্কুট জঙ্গিপুরের সাহাব্বুর শেখ ও হারুন শেখের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। এই কাজের জন্য তার ১৫০০ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চোরাচালানের আগেই বিএসএফ জওয়ানরা তাকে ধরে ফেলে।
১১ ফেব্রুয়ারি তিনটি সোনার বিস্কুট সহ কাটাখালি সীমান্তে এক পাচারকারীকে গ্রেফতার করে বিএসএফ। আটক সোনার ওজন ৩৪৯.৮৯ গ্রাম। দাম ১৯.৭৬ লক্ষ টাকা। ধৃতের নাম হাবিল শেখ। তার বাড়ি ভারতীয় সীমান্তের কাটাখালির পাশে।বিএসএফ জানায়, কাটাখালি সীমান্ত এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় জওয়ানদের। তখন তাকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে জওয়ানরা। তল্লাশি শুরু করলে দেখা যায়, পায়ুদ্বারে কালো টেপ দিয়ে একটি ছোট প্যাকেট আটকানো আছে। প্যাকেটের মধ্যে রয়েছে তিনটি সোনার বিস্কুট। বিএসএফ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে ওই পাচারকারী স্বীকার করে, এই সোনা পার্শ্ববর্তী দেশের চোরাকারবারী চাঁপাই নবাবগঞ্জের আজম নামে এক যুবক তাকে দিয়েছিল। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সেগুলো ভারতের কাটাখালি গ্রামের মেকাইল শেখ নামে এক ব্যক্তির কাছে সেগুলি পৌঁছে দওয়ার কথা ছিল। তার জন্য ১৫০০ টাকা পাওয়ার কথা ছিল তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy