পাশাপাশি দু’টো ঘাট— কুলগাছি আর হাটপাড়া।
গঙ্গার কোলে সীমান্ত ছোঁয়া দুই ঘাটে দিনভর ভিড় নেই। বেলা-অবেলায় কখনও কেমনে এক-আধটা নৌকা ভেড়ে।
এমনই নিস্তরঙ্গ দুই ঘাটের নিলাম উঠেছে আকাশ ছোঁয়া, ১২ লক্ষ টাকা। কেন?
সেই দুর্মূল্যতার মধ্যেই রহস্য খুঁজছে পুলিশ, ভ্রূ কুঁচকে গিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনেরও।
নিলামে এই মেঘ ছোঁয়া দাম দেখে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের হাতছানি থাকলেও, কপালে ভাঁজও পড়ছে কিঞ্চিৎ।
রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা তো কবুলই করে ফেলছেন, ‘‘ভাল লাগছে ঠিকই তবে ভয়ও লাগছে জানেন তো!’’ আশঙ্কার চোরাস্রোত রয়েছে পুলিশের মধ্যেও। শঙ্কায় সীমান্ত রক্ষীও— পাচারকারীদের চোখ পড়ল না তো!
জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলামের কথায় সে সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে আরও। বলছেন, ‘‘গতবার ১৪ লক্ষ টাকায় নিলাম হয়েছিল জঙ্গিপুর ঘাট। এ বার তার দর পড়েছে ৯ লক্ষ টাকায়। এমন জমজমাট ঘাটের দর নামছে আর সীমান্ত এলাকায় এমন চড়া দাম?’’ তিনি স্পষ্টই বলছেন, ‘‘পাচারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিই কী করে বলুন!’’
জেলা পুলিশ ও বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগেও জঙ্গিপুরের সীমান্ত এলাকা ঘুরে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মধুকর গুপ্তা পাচারের ‘স্বর্গরাজ্য’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছিলেন এলাকাটিকে। সেই থেকে পাচার রুখতে জঙ্গিপুর-লালগোলা রাজ্য সড়কে বসেছে কড়া প্রহরা।
মাস কয়েকের মধ্যে তার সুফলও মিলেতে শুরু করেছে। বিএসএফের দাবি, পাচার কমেছে বেশ কিছুটা।
বিএসএফের এক কর্তা বলছেন, ‘‘পাচারকারীরা তাই হদ্দ ওই গ্রামীণ ঘাটকেই বেছে নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।’’ সাগরদিঘির গাদি-মনিগ্রাম পার করে গ্রামীণ রাস্তা ধরে খানিক এগোলে ওই দু’টি ঘাট।
কুলগাছি ও হাটপাড়া—এই দুই ঘাটের দূরত্ব মাইল দেড়েকের। দু’টি ঘাটের রাস্তা গিয়ে মিশেছে কুলগাছি বটতলায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে যাওয়ার রাস্তায় পুলিশ-প্রশাসনের দেখা মেলে না। মাটির ভাঙাচোরা ওই পথ সাধারণত নির্জন। ওই রাস্তা দিয়ে কয়েকটি গ্রাম পেরোলেই মিলবে সীমান্ত লাগোয়া রামনগর।
স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামানও বলছেন, ‘‘গরু পাচারের জন্য এই দুই ঘাটকে যে পাচারকারীরা বেছে নেয়নি তা কে বলতে পারে!’’
রঘুনাথগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতিরসদস্য কংগ্রেসের প্রকাশ সাহা বলছেন, ‘‘পাচার এখন কমেছে ঠিকই তবে, হয়তো রুট বদল করে যদি সাফল্য আসে, তাই ওই গ্রামীণ ঘাটগুলোর দিকে নজর পড়েছে পাচারকারীদের।’’
তবে, বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেহ দানা বাঁধায়, ওই গাটেও প্রহরা বসানোর কথা ভাবছে তারা। সে প্রহরায় পারাপারে কতটা ভাটা পড়ে এখন দেখার সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy