নিজস্ব চিত্র
নদী পাড়ে সার দিয়ে বাঁধা নৌকা, ঝুড়িতে থরে থরে সাজানো ইলিশ। সেই ইলিশেই চাল থেকে জাল, কস্তা পেড়ে শাড়ি থেকে ছোট মেয়ের ফুলকাটা ফ্রক— ইলিশের ঘেরাটোপে এই দিনযাপন এখন ফেলে আসা ইতিহাস। এখন একটা ইলিশ কপালে জুটলে নদীর জল কপালে ঠেকিয়ে রুপোলি দেবতাকে পেন্নাম করেন ধীবরেরা।
কেজি খানেক ওজনের পদ্মার ইলিশের দাম এখন দু’হাজার টাকা। বছর পনেরো আগেও ছবিটা এমন ছিল না। এত তাড়াতাড়ি বদলে যাওয়া এই ইলিশ-চিত্র নিয়ে পদ্মাপাড়ের পুরনো ধীবর পরিমল মণ্ডল বলছেন, ‘‘ভাঙনে নদী বদলেছে তার গতিপথ, ফলে পদ্মার বড় অংশটাই এখন বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে চলেছে। এখনও আমরা যেটুকু পদ্মায় নামতে পারি, সেখানে নামতে গেলেও হাজারও বাধা। মাছ কোথায় পাব বলুন দেখি!’’
তার উপরে রয়েছে কারেন্ট জালের অত্যাচার। পরের মরসুমের জন্য হতাশা ছড়িয়ে রেখে কারেন্ট জালের সৌজন্যে মাছের সঙ্গে এখন চারা এমনকি ডিমও উঠে আসছে জালে। এই অকাল মৎস্যহীনতায় জাল গুটিয়ে এখন অনেকেই পাড়ি দিচ্ছেন ভিন্্ রাজ্যে অন্য কোনও কাজের খোঁজে।
জলঙ্গির গুড়িপাড়ার অনন্ত মণ্ডল বলছেন, ‘‘জন্মের পর থেকেই নৌকা, জাল আর মাছ নিয়েই বড় হয়েছি আমরা, বাপ-ঠাকুর্দার হাত ধরে পদ্মায় ভেসে বেড়িয়েছি ভোর থেকে রাত্রি পর্যন্ত। অনেক সময় নৌকাতেই রাত্রিযাপন হত মৎস্যজীবীদের, সেখানেই ছোট চুল্লিতে রান্নাবান্না থেকে খাওয়া দাওয়া হত চাঁদের আলোয় ভেসে ভেসে। রাতে প্রচুর মাছ উঠত জালে, আর সকাল হলেই সেই মাছ নিয়ে বাবার হাত ধরে আমরা হাজির হতাম বাজারে।’’
ছবিটা খুব পুরনো নয়, বছর পঁচিশ আগেও এমন ছবি দেখা গিয়েছে জলঙ্গি ও রানিনগর সীমান্তে। কিন্তু ভাঙনের ফলে নদী বাংলাদেশের সরে যাওয়া আর অবৈধ জালের জন্য নদীতে মাছ আর নেই।
গুড়িপাড়ার মৎস্যজীবী পরিমল মণ্ডল বছর দশেক আগেই পা রেখেছেন ভিন রাজ্যে। তার দাবি, ‘‘পরিস্থিতি বুঝে জাল গুটিয়ে ঘর ছেড়ে ছিলাম বলেই সংসার টিকে আছে, না হলে আজকে হয়তো না খেয়েই মরতে হত আমাদের।’’ পরিমলের মতো সীমান্তের শতাধিক মৎস্যজীবী এখন কেউ কেরল, গুজরাত বা অন্য কোনও রাজ্যে চলে গিয়েছেন কাজের খোঁজে। আবার কেউ কেউ বাজারে খুলেছেন চায়ের দোকান। কেউ আবার নিজের সাইকেলের পিছন থেকে মাছের ঝুড়িটা খুলে ফেলে হরেক মালের সামগ্রী ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy