দুর্ভোগ: নম্বরপ্লেটহীন পুলকার। নিজস্ব চিত্র
হুগলির পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় আহত ছাত্র ঋষভ সিংহের মৃত্যুর পরে উদ্বেগ বাড়ছে মুর্শিদাবাদে। বহরমপুর শহর তো বটেই, মুর্শিদাবাদের গা-গঞ্জেরও অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে স্কুলগাড়ির ব্যবহার করেন। ছোট চার চাকার ভ্যান, ম্যাজিক গাড়ি, টোটোর মতো গাড়ি কিংবা কোথাও কোথাও লজঝড়ে বাসকে পড়ুয়াদের নিয়ে রাস্তায় ছুটতে দেখা যায়। বেআইনি হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি, স্কুলগাড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার জেরে কোথাও কোথাও ছোটখাটো দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে। সম্প্রতি পোলবার ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা রাস্তায় নেমে গাড়ি পরীক্ষা শুরু করেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে কিছুটা শিথিল রয়েছে। মাধ্যমিকের পরে জোর কদমে তারা মাঠে নামবে।
তবে খোদ পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত মালিকাধীন গাড়ি স্কুলগাড়ি হিসেবে চলছে। অনেক গাড়িতে অতিরিক্ত পড়ুয়া নিচ্ছে। যে সব গাড়িতে আসন সংখ্যা সাত সেখানে ১২-১৫ জন পড়ুয়া নিয়ে গাড়ি ছুটছে। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য থাকা স্পিড লিমিট ডিভাইস খুলে দিচ্ছে। এমন বেশ কিছু বিষয়ে আমাদের নজরে আসার পর পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে।’’
পোলবার ঘটনার পরে জানা যায়, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির চালক যে মাঝপথে বদলে যেত, সে কথা অভিভাবকেরা জানতেনই না। বহরমপুরের অধিকাংশ অভিভাবকও স্কুল গাড়ির চালকের ফোন নম্বর বা বড় জোর আধার কার্ডের জেরক্স রাখা ছাড়া অন্য কোনও তথ্যও রাখেন না। কিছু স্কুল বহরমপুর শহরের মধ্যে যাতায়াত করতে নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করে। কিন্তু যে সব বিদ্যালয়ের নিজস্ব গাড়ি নেই, সেই সব স্কুলের পুলকারের সব তথ্য অভিভাবকদের কাছে থাকে না। কোনও গাড়ির চাকার অবস্থা খারাপ। কোনও গাড়ির আলো নেই। কোনও গাড়ির নম্বরপ্লেট পর্যন্ত নেই। তবে কি সে খবর অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ বা জেলা প্রশাসন কারও কাছেই নেই?
এক অভিভাবক ব্রততী সমাজদার বলেন, “আমরাও দেখি পুলকারগুলোর কী অবস্থা। কিন্তু উপায় নেই। চালকের উপর নির্ভর করেই স্কুলে পাঠাতে হয় বাচ্চাকে।” এক অভিভাবক জয়িতা ঘোষ বলেন, “গাড়ির যাবতীয় খুঁটিনাটি জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। চালককেই তাই বিশ্বাস করতে হয়।”
গোটা পাঁচেক স্কুল গাড়ি রয়েছে এক ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, “এত কম পয়সা পাই যে, তাতে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করে গাড়ির চালককে মাসে মাইনে দিয়ে বাণিজ্যিক গাড়ির লাইসেন্স করতে গেলে হাতে কিছু থাকবে না।’’ এতেও শেষ নয়। অনেক চালকেরও লাইসেন্স রয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এক বেসরকারি বিদ্যালয়ের কর্মচারী জানান, “চালকের প্রয়োজনীয় নথি আমরা রেখে দিই।” কিন্তু চালকের উপরে নজরদারি? রাস্তায় গাড়ির চালক বদলে যাচ্ছে কি না, তার খবর কেউ রাখছেন কি? শহরের এক বেসরকারি বিদ্যালয়ের স্কুল গাড়িতে অত্যাধুনিক জিপিএস সিস্টেম লাগানো আছে। কিন্তু সেই গাড়িতে পড়ুয়ারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন বলেই অভিযোগ। ওই বেসরকারি বিদ্যালয়ের মালিক পঙ্কজ চৌধুরী বলেন “রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে কিংবা ভিড়ে আটকে গেলে অনেক সময় এক বাস থেকে অন্যবাসে পড়ুয়াদের তুলে নেওয়া হয়। তখন পডুয়াদের দাঁড়িয়ে যেতে হয়।” তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েক জন অভিভাবক মিলে একটি ছোট গাড়ি ভাড়া করেন। সেই গাড়িতেই পড়ুয়ারা নিয়মিত যাতয়াত করে। সে সব ক্ষেত্রে স্কুলগুলির নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে।
তা হলে প্রশাসন কী করছে? ১৯৮৮ সালের পরিবহণ আইন অনু্যায়ী যাত্রীবাহী গাড়ির কাছে দূষণের শংসাপত্র, ইনসিওরেন্সের শংসাপত্র, ট্যাক্সের শংসাপত্রসহ দশটি ন্যূনতম কাগজ রাখার কথা। প্রত্যেক বছর এই গাড়িগুলো সেই সমস্ত শংসাপত্র নবীকরণ করাতে যায়। কিন্তু পরিবহণ দফতরেরই এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দফতরের সামনে এত ভিড় থাকে যে, সব কাগজ সব সময় দেখা সম্ভব হয় না।” তিনি জানান, অনেক সময় পুলকারের নথিপত্রে অসঙ্গতি দেখলে “পড়ুয়া নিয়ে যায় বলে সেগুলোকে শুধু সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়।” মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘স্কুলগাড়ি ধরে প্রয়োজনীয় নথিপত্র, ফিটনেস সার্টিফিকেট দেখা হচ্ছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে আরও ব্যাপক হারে স্কুলগাড়ি পরীক্ষা হবে।’’ মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমরকুমার শীল বলেন, ‘‘পুলকারের বিষয়ে রাজ্য থেকে নির্দেশ সামনের সপ্তাহে বেসরকারি স্কুলগুলিতেও এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হবে।’’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলেন, ‘‘যে সব স্কুলে পুলকার ব্যবহার হয় তার তালিকা শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে। পুলকারের মালিকদের নিয়ে বৈঠক করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy