বছর পঞ্চান্নের পারুল সরকার। উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুর থেকে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলায়। জনা পঞ্চাশ পুণ্যার্থীর একটি দলে ছিলেন তিনি। মৌনী অমাবস্যার ভোরে পদপিষ্টের ঘটনার সময় দল থেকে আলাদা হয়ে যান। তার পর থেকে কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না পারুলের। প্রৌঢ়ার সঙ্গেই এসেছিলেন তাঁর আত্মীয় লক্ষ্মী বৈরাগী। তিনি প্রতিদিন হাসপাতালে, থানায় খোঁজ নিচ্ছেন। এমনকি মর্গে মর্গে পর্যন্ত ঘুরছেন পারুলের খোঁজে। প্রৌঢ়া আদৌ বেঁচে আছেন, না কি মারা গিয়েছেন— কিছুই বুঝতে পারছেন না লক্ষ্মী।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পারুলের ওই আত্মীয়। ‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’কে লক্ষ্মী বলেন, “কোথাও কোনও খোঁজ পাচ্ছি না। প্রশাসনের থেকেও কোনও কিছু জানানো হচ্ছে না।” এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মৌনী অমাবস্যার দুর্ঘটনার পর থেকে অনেকেই তাঁদের পরিচিতদের খোঁজ পাচ্ছেন না। জুনা আখড়ার ৬২ বছরের বৃদ্ধ সন্ন্যাসী রাজকুমার গিরিও খুঁজে চলেছেন পরিচিত এক সন্ন্যাসীকে। তিনিও পরিচিত সন্ন্যাসীর ছবি নিয়ে ঘুরছেন হাসপাতালে হাসপাতালে।
প্রয়াগরাজের মতিলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের মর্গ শনিবার দেখা মেলে বৃদ্ধ সন্ন্যাসীর। ঘর ভর্তি লাশের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পদপিষ্টের ঘটনার পর থেকে তাঁর পরিচিত এক সাধু বিন্দরামের খোঁজ মিলছে না। সম্ভবত মারা গিয়েছেন। কিন্তু সরকারি খাতায় মৃত ৩০ জনের তালিকায় নেই সেই নাম। গিরি তাই রোজ আসেন মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। খোঁজ নিয়ে যান। মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়াই এসআরএন হাসপাতাল। সেখানেও একটি মর্গ রয়েছে। কিছু ক্ষণ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে থাকার পর হাসপাতালের মর্গের দিকে চলে যান গিরি।
আরও পড়ুন:
নেপাল থেকে আসা সাত জনের একটি দলে ছিলেন বিন্দরাম। পদপিষ্টের ঘটনার পর থেকে খোঁজ নেই তাঁর। গিরি জানালেন, ঘটনার পর থেকে তিনি প্রতিদিন এই দুই মর্গে খোঁজ নিয়ে যান। এ রকম আরও অনেকে রয়েছেন। বিহারের সমস্তিপুরের গণপতি কুমার গত তিন দিন ধরে তাঁর বোনকে খুঁজছেন। ঝাঁসির নাথুরাম খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁর স্ত্রীকে। কিন্তু কেউই কোনও খোঁজ পাননি এখনও।
গত বুধবার ভোরে কুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩০ জনের। মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে কুম্ভমেলায় ‘শাহি স্নান’-এর জন্য মঙ্গলবার রাত থেকেই ভিড় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রাত ২টো নাগাদ ব্যারিকেড ভেঙে যায় ভিড়ের চাপে। ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে পড়ে যান। সেই সময়ে বাকিরা তাঁদের মাড়িয়ে এগিয়ে যান। এই ঘটনার পর ‘শাহি স্নান’ দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সরকারি খাতায় মৃতের সংখ্যা এখনও ৩০। তবে অনেকেরই এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।