পালবাড়িতে বেড়েছে ব্যস্ততা। সতীশনগরে। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির উঠোনে এক মনে ব্লেড দিয়ে মাটির সরার কানা সমান করছিলেন বছর পঞ্চাশের গৌরদাসী পাল। পাশেই মাটির পাত্র রোদে শুকাতে দিচ্ছিলেন তাঁর বৌমা জয়ন্তী। হঠাৎ করেই তাঁদের ব্যস্ততা তুঙ্গে উঠেছে। সৌজন্য কৃষ্ণনগরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হওয়া। মাটির পাত্রের কদর এবং চাহিদা এক ধাক্কায় আকাশ ছুঁয়েছে। সকাল থেকে চলছে বিভিন্ন মাপের সরা, মাটির প্লেট, হাঁড়ি এমনকি চায়ের কাপ তৈরির কাজ।
অথচ, বছরের পর বছর মাটির পাত্রের ব্যবসায় মন্দা চলায় বাড়ির দুই ছেলে এক জন টোটো চালান, অন্য জন কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। চায়ের ভাঁড়ের অর্ডার সামান্য থাকলেও সরা বা হাঁড়ির চাহিদা একেবারেই ছিল না। কিন্তু কৃষ্ণনগর শহরে প্লাস্টিক ও থার্মোকল নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সেই চাহিদা আবার ফিরে এসেছে বলে সতীশনগরের পালেদের দাবি।
গৌরদাসীদেবী বলছেন, “ছেলেরা বাপ-ঠাকুর্দার কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেল। হঠাৎ এমন ভাবে মাটির কদর বাড়বে স্বপ্নে ভাবিনি।’’ শুধু তিনি নন, খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে সতীশনগরের পাল পরিবারগুলিতে। আগে গ্রামের প্রায় ৩০-৩৫টি পরিবার মটির পাত্র তৈরির কাজ করত। প্লাস্টিকের দাপটে মাটির পাত্রের বাজার মন্দা হওয়ায় অন্তত ১৫টি পরিবার এই পেশা থেকে সরে গিয়েছে। নতুন প্রজন্ম আর এই পেশায় আসছিল না। কিন্তু আবার নতুন করে বিপুল বায়না আসতে শুরু করায় পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন। লব পাল যেমন বলছেন, “এরই মধ্যে দুই মিষ্টির দোকানের মালিক বিভিন্ন মাপের হাঁড়ি আর সরার বায়না দিয়েছেন। চার জন চায়ের দোকানের মালিক ভাঁড় আর খুরির বায়না দিয়ে গিয়েছেন।”
বৃদ্ধ সুরেশ পাল বলছেন, “তিন জন মিষ্টির দোকানের মালিক আমাকে সরা আর হাঁড়ি বানাতে বলেছেন।” কুমোরপাড়ার কুশ পালের কথায়, “লালুপ্রসাদ যাদব রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে শেষ মাটির ভাঁড়ের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছিল।”
সমস্যাও কিছু রয়েছে। মাটি থেকে শুরু করে কাঠ, কাঠের গুঁড়োর দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। ফলে মাটির পাত্র তৈরির খরচ বেড়েছে। সেই মতো দাম দিতে চাইছেন না অনেক দোকানি। যদিও পালের মনে করছেন, পরিমাণে বেশি বিক্রি হলে তাঁরা সামান্য লাভ রেখেও দামটা কমিয়ে রাখতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy