বছরখানেক আগে জ্যৈষ্ঠ মাসের চ়়ড়া রোদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটি কেটেছেন ওঁরা। তারপরে আরও একটা জ্যৈষ্ঠ কাটতে চলেছে। এত দিনেও লালগোলার কয়েক হাজার দিনমজুরের কপালে মজুরি জোটেনি!
ওই মজুরদের একশো দিনের কাজে লাগিয়েছিলেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত। বছর খানেক পেরোলেও মজুরি দিতে না পারায় পঞ্চাযেত সদস্যরা দিনমজুরদের রোষের কোপে পড়েছেন। কংগ্রেসের দখলে থাকা লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপশিখা হালদার বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পটি কেন্দ্রের। পুরো টাকা কেন্দ্রই দেয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন কেন্দ্র ওই টাকা না দেওয়ায় লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় দিনমজুরদের প্রাপ্য প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা অনেক দিন ধরে বকেয়া পড়ে রয়েছে।’’ তবে স্বস্তির কথাও শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সম্প্রতি কেন্দ্র সেই টাকা দিয়েছে। আশা করছি, দিন সাতেকের মধ্যে দিনমজুরদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়বে।’’
মজুরি না মেলায় লালগোলা থানা এলাকার দেওয়ানসরাই গ্রাম পঞ্চেয়েতের চরগয়েশপুরের মওলা বক্স ও ইনিয়ারা বিবিদের মতো সব দিনমজুরের অবস্থাই সঙ্গীন। ওই গ্রামটির বিচ্ছিন্ন ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সারা বছর তাঁদের কাজ জোটে না। ফলে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষই পেটের টানে রাজমিস্ত্রি বা দিনমজুরি করতে জেলার বাইরে চলে যান। ওই গ্রামের ইনিয়ারা বিবি বলেন, ‘‘স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে জেলার বাইরে। ভাবলাম একশো দিনের কাজ করে অভাব একটু কমাব। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাটি কেটেছি। কিন্তু বছর ঘুরতে চললেও আজও মজুরি পেলাম না!’’ গ্রামেরই আর এক দিনমজুর মওলা বক্সের আবার অভিযোগ, এমনিতেই মজুরির টাকা মিলছে না, তার উপরে পঞ্চায়েত নির্ধারিত মজুরির চেয়ে কম টাকা দেওয়ার কথা বলছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পে দৈনিক মজুরি ১৬৯ টাকা হলেও চরগয়েশপুরের মজুরদের জন্য ধার্য হয়েছে দৈনিক ১৪৫ টাকা। তা-ও আবার টাকা পাচ্ছি না।’’
ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য জান মহম্মদ শেখ বলেন, ‘‘দৈনিক কত ঘন ফুট মাটি কাটা হয়েছে তা মাপজোক করে জেনে নিতে হয়। তারপর সেই মাপ মতো মজুরি ঠিক করা হয়। সেই অনুসারে চরগয়েশপুরের মজুরদের দৈনিক মাথা পিছু ১৪৫ টাকা মজুরি ধার্য হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হিসেবে একশো দিনের কাজের তদারকি করতে হয়েছে আমাকে। ফলে এক বছর ধরে মজুরি না পেয়ে গরিব দিমমজুরদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে।
দেওয়ানসরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর, লস্করপুর, কালিয়াগাছি, শ্রীরামপুর গ্রামে একশো দিনের কাজ হয়েছে চরগয়েশপুরের ৩-৪ মাস পরে। এ কথা জানিয়ে জান মহম্মদ বলেন, ‘‘কিন্তু ওই গ্রাম গুলির মজুরদের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে কবেই। দেওয়া হয়নি কেবল চরগয়েশপুরের মজুরদের।’’ এ রকম পদে পদে চরগয়েশপুরের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে চরগয়েশপুরের বরাবর বঞ্চিত। ভাগীরথীর পূর্বপাড়ে গ্রাম পঞ্চায়েত, থানা ও মহকুমা- সহ যাবতীয় সরকারি অফিস ও জনবসতি। ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে কেবলমাত্র চরগয়েশপুরের অবস্থান। ফলে থানা, বিডিও অফিস, রেশন দোকান-সহ যাবতীয় পরিষেবা পেতে চরগয়েশপুরের মানুষকে দু’টি থানা এলাকা ডিঙিয়ে একাধিক যানবাহন পাল্টে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথপাড়ি দিতে হয়। এ কথা জানিয়ে জান মহম্মদ বলেন, ‘‘এই ভৌগলিক বিচ্ছন্নতার জন্য সরকারি সব বিষয়ে আমরা বঞ্চিত। শিলান্যাসের পর প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল, তবুও আজও গ্রামের রাস্তা ঢালাই হয়নি।’’ এ জাতীয় নানা ধরণের বঞ্চনার কথা মেনে নিয়ে লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপশিখা হালদার বলেন, ‘‘ওই গ্রামের রাস্তাটি বিধায়ক কোটার টাকা থেকে কিছু দিনের মধ্যে কংক্রিট ঢালাই করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy