Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
হাঁসখালি

অ্যাসিড হামলায় অপরাধী অধরাই

রাতের অন্ধকারে মা-মেয়ের বিছানায় অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এক জনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে হাঁসখালির গাজনা হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়া মেয়েটির এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দু’জনকে আটকও করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

রাতের অন্ধকারে মা-মেয়ের বিছানায় অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এক জনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

তবে হাঁসখালির গাজনা হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়া মেয়েটির এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দু’জনকে আটকও করা হয়েছে।

সোমবার গভীর রাতে হাঁসখালির গাজনা দক্ষিণপাড়ায় অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়ার পরেই মা-মেয়েকে বগুলা হয়ে কলকাতায় এনআরএসে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়েছিল। বুধবার রাতে মাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ছাত্রীটি ভর্তি রয়েছে। ফলে, তার মা-ও বাড়ি না ফিরে হাসপাতালে মেয়ের কাছেই রয়ে গিয়েছেন।

বুধবার এনআরএসে গিয়ে ছাত্রী ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারী অফিসাররা। তার ভিত্তিতে হাঁসখালি এলাকারই দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এদের এক জনের গাজনা হাইস্কুলের সামনে একটি মোবাইল ও বইখাতার দোকান রয়েছে। অন্য জন তাঁরই বন্ধু। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই দোকানে নিয়মিত যাতাযাত ছিল ছাত্রীটির। মোবাইলে গান ডাউনলোড হোক বা অন্য কারণে সে ওই দোকানে প্রায়ই যেত। সেখানেই দোকানদারের বন্ধুর সঙ্গে তার পরিচয়। তিনি বিবাহিত, তবু ছাত্রীটির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন বলে একটি সূত্রে খবর পেয়েছে পুলিশ।

বুধবারই ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছিল, এক যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে বাড়িতেও অশান্তি হয়েছিল। তবে এ দিন ছাত্রীর কলেজ-পড়ুয়া মেজদা দাবি করেন, “কোনও ছেলের সঙ্গে বোনের সম্পর্কের কথা আমাদের জানা ছিল না। এই ঘটনার পরে হাসপাতালে গিয়ে বোনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এক বিবাহিত যুবক ওকে উত্ত্যক্ত করত। মাস তিন আগে এক বার হুমকিও দিয়েছিল।”

ইতিমধ্যে পুলিশ অ্যাসিড আক্রান্ত ছাত্রীর মোবাইল হাতে পেয়েছে। সেটি ঘেঁটে সূত্রের খোঁজ চলছে। ছাত্রীটির মেজদার দাবি, বোনের যে বান্ধবীকে পুলিশ জেরা করছে, তার কাছেই ফোনটির ‘মেমোরি কার্ড’ রাখা আছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আমরা মেয়েটির সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলতে পারছি না। তা পারলেই তদন্ত অনেকটা এগিয়ে যেত।”

সোমবার রাতে দরজার উপরের ফাঁক দিয়ে যখন অ্যাসিড ছোড়া হয়, ওই ঘরেই অন্য চৌকিতে শুয়ে ছিলেন ছাত্রীটির বাবা। মা-মেয়েকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কলতলায় ছুটে যেতে দেখেন তিনি। বিছানা-বালিশ, জামাকাপড়ও পুড়ে যায়। কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তা খুঁজে বের করার পাশাপাশি এ ধরনের মারাত্মক অ্যাসিড কী ভাবে তাদের হাতে গেল, তারও উত্তর খুঁজছে পুলিশ। কেননা এই ধরনের অ্যাসিড সাধারণত সোনার দোকানে ব্যবহার করা হয়, তাদেরই তা কেনার লাইসেন্স থাকে। এর আগে করিমপুর, তাহেরপুর বা চাকদহের মতো যে সব জায়গায় অ্যাসিড-হামলা হয়েছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সোনার দোকান বা লাইসেন্স ছাড়াই অ্যাসিড বিক্রির প্রসঙ্গ তদন্তে উঠে এসেছিল।

হাঁসখালি তথা গাজনায় বেশ কয়েকটি সোনার দোকান আছে। প্রশাসনেরই একটা অংশ স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, নজরদারি না থাকায় সে সব দোকান থেকে অ্যাসিড পাওয়া কঠিন নয়। নাম গোপন রাখার শর্তে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদেরও একটা অংশ তা স্বীকার করছেন। তবে অখিল ভারত স্বর্ণকার সঙ্ঘের রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা সদস্যদের পরিষ্কার জানিয়েছি, কোনও ভাবেই লাইসেন্স ছাড়া কাউকে যেন অ্যাসিড না দেওয়া হয়।’’ তবে অনেক সময়েই বহু কারিগর বাড়িতে কাজ করার জন্য অ্যাসিড নিয়ে যান স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘হাত ঘুরে কোনও ভাবে তা ভুল হাতে পৌঁছে যেতেও পারে।”

জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট রেজিস্টার মেনে চলতে হবে। কাকে, কখন, কী কারণে, কতটা অ্যাসিড বিক্রি করা হল তা লিখে রাখতে হবে। বিশেষ নজরদারি দল গড়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Acid attacker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE