Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
police

ভোটের দিন নদিয়ায় কলকাতা পুলিশের কর্মীকে বেধড়ক মার, ভর্তি হাসপাতালে, প্রকাশ্যে এল ছবি

গত ৮ জুলাই নির্বাচনের দিন নদিয়ার গাংনাপুরে কর্তব্যরত অবস্থায় কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবলকে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধরের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

A police constable was beaten by some people at Gangnapur of Nadia

কনস্টেবলকে মারধরের সেই দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
গাংনাপুর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ১৯:০২
Share: Save:

পুলিশকে গণপিটুনির ছবি ফিরল রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে। গত ৮ জুলাই নির্বাচনের দিন নদিয়ার গাংনাপুরে কর্তব্যরত অবস্থায় কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবলকে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধরের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পুলিশকর্মী গুরুতর জখম হয়ে ভর্তি রয়েছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, দুই পুলিশকর্মীকে ঘিরে ধরেছেন গাংনাপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে এক পুলিশকর্মী স্থানীয় এক জনের বাড়িতে ঢুকে খাটের তলায় লুকিয়ে পড়েন। তিনি বেঁচে গেলেও হামলাকারীদের রোষের হাত থেকে রেহাই পাননি রাজু দাস নামে কলকাতা পুলিশের অপর কনস্টেবল।

স্থানীয় সূত্রে খবর, নদিয়ার রানাঘাটের পোড়াবাড়ি কালিদাস প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৭৯ নম্বরের দুটি বুথে ভোটগ্রহণ চলছিল। বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা পুলিশের দুই কনস্টেবল এবং দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা বুথকেন্দ্রে ঢুকে অবাধে ছাপ্পা ভোট দেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে যান বলে অভিযোগ। নিরাপত্তারক্ষীরা পাশের বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেন। সেই সময় রাজ্য পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম ভোটকেন্দ্রের এলাকায় প্রবেশ করে। বিজেপি এবং সিপিএমের কর্মীসমর্থকরা এক ‘দুষ্কৃতী’কে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অভিযোগ, বেশ কিছুটা নিয়ে যাওয়ার পর ওই দুষ্কৃতীকে নিরাপদ স্থানে ছেড়ে দেয় পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের মারফত সেই খবর যায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। এর পর উত্তেজিত জনতা ফের বুথে জড়ো হয়। ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার-সহ সমস্ত নথি পুকুরের জলে ফেলে দেন তাঁরা। ‌ দুই পুলিশ কনস্টেবলও পাকড়াও হয়েছেন। তখন দুই নিরাপত্তা রক্ষীকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। প্রাণভয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালান দুই নিরাপত্তারক্ষী। প্রথম একটি বাড়িতে তাঁরা আত্মগোপন করেন। সেখানেও চড়াও হয় ওই জনতা। দুই কনস্টেবলকে টেনে বার করে বেধড়ক মারধর করা হয়। ধস্তাধস্তির মাঝে দুই কনস্টেবল পালিয়ে অন্য একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন । সেখানে পৌঁছে রাজু দাস নামে কলকাতা পুলিশের এক কনস্টেবলকে বাঁশ ও গাছের ডাল দিয়ে মারধর করা হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই কনস্টেবলকে উদ্ধার করা হয়। অন্য কনস্টেবলকে ওই বাড়ির খাটের তলা থেকে উদ্ধার করে কুইক রেসপন্স টিম। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ৯ জনকে। ধৃতদের সাত দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজুর হাত ভেঙেছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লেগেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। ওই কাণ্ডে ইতিমধ্যেই ন’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালত তাঁদেরকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে বাম এবং বিজেপির হাত। বামেদের অবশ্য দাবি, পুলিশকর্মী জনরোষের শিকার হয়েছেন।

খাটের তলায় ঢুকে ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। তাঁদের উপর বেধড়ক লাঠি চালাচ্ছে উন্মত্ত জনতা। মারের চোটে ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে। কোনও পুলিশকর্মীর মাথার হেলমেট গিয়েছে ভেঙে। তবু থামেনি মারধর। গত এপ্রিল মাসে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের এমন ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল। এ বার সেই দৃশ্য দেখা গেল পঞ্চায়েত ভোটে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE