Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
ভাতজাংলায় পঞ্চায়েত সদস্যদের ইস্তফা
Amit Shah

ভাঙাগড়ার হিসেব শুরু শাহ আসতেই

ভাতজাংলা আবার রাজ্যের কারামন্ত্রী তথা কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাসের নিজের এলাকা।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

সম্রাট চন্দ ও  মনিরুল শেখ
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:০২
Share: Save:

আশঙ্কা-উদ্বেগ ছিলই। শুভেন্দু-পর্ব এবং সেই প্রেক্ষাপটে অমিত শাহ রাজ্যে পা দেওয়ার পরে শাসক শিবিরে দল ভাঙার উদ্বেগ তীব্র হয়েছিল। তারই মধ্যে দলীয় প্রধান এবং জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে শনিবারই দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন তৃণমূলের ভাতজাংলা পঞ্চায়েতের সাত সদস্য। তবে তাঁরা বিজেপি-তে যোগদান করছেন বলে এখনও খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু নিঃসন্দেহে এতে শাসক শিবিরে আশঙ্কার মেঘ গাঢ়তর হয়েছে।

ভাতজাংলা আবার রাজ্যের কারামন্ত্রী তথা কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাসের নিজের এলাকা। তিনি অবশ্য দলে ধাক্কা লাগার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘কৌশিককে আগেই দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের সংগঠন ওখানে খুবই শক্তিশালী। দলের মধ্যে এ সবের কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ তবে রাজনৈতিক মহলের খবর, কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের ভাতজাংলা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের কোন্দল ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগদানের দিনই দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন তৃণমূলের সাত পঞ্চায়েত সদস্য, রাজনৈতিক মহলের মতে যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ।’ দলত্যাগীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান দুর্নীতি করছেন। তাঁরা এর প্রতিবাদ করলেও কোনও সুরাহা হয়নি, উল্টে তাঁদের দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হচ্ছে না। এমনকি, তাঁদের এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজও করা হচ্ছে না। বিদ্রোহীদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন প্রধান গৌরী সরকার, আরেক প্রাক্তন প্রধান কমল ঘোষের ছেলে কৌশিক ঘোষ।

কৌশিকবাবুর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত প্রধান দুর্নীতির সাথে যুক্ত। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম, তাই আমাদের সব বিষয়ে বাদ রাখা হচ্ছে। আমাদের এলাকায় উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে না। আমরা দল ছাড়ছি সেটা দলকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।” এর পাল্টা ভাতজাংলা পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপন ঘোষ আবার দাবি করেন, “আমি দুর্নীতি করেছি কিনা সেটা মানুষ বলবে। কৌশিক ঘোষ ও বাকিরা দুর্নীতিতে ডুবে আছেন। কৌশিক চেয়ারের লোভে এখন এ সব করছেন।” এই ডামাডোলের আগেই আবার গত কয়েক দিন ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে ব্যানার-পোস্টার পড়েছে। নদিয়ায় সেই অর্থে কোনও দিনই শুভেন্দু রাজনৈতিক কাজকর্মে জড়িত ছিলেন না। তা সত্বেও সম্প্রতি জেলার বেশ কয়েক জায়গায় শুভেন্দু-অনুগামীদের উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে। আবার দলে সাম্প্রতিক সাংগঠনিক রদবদলের পর জেলায় শাসক দলের মধ্যে ক্ষোভও নজরে আসছে। সেই বিক্ষুব্ধ অংশ ‘দাদা’র পথ নিয়ে শাহ শিবিরে যাবেন কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে।

সমস্যা তৈরি হয়েছে হরিনঘাটাতেও। সেখানে তৃণমূলের শহর সভাপতি পদ থেকে সম্প্রতি সরানো হয়েছে উত্তম সাহাকে। সেখানে আনা হয়েছে দেবাশিস বসুকে। হরিনঘাটা পুরসভার প্রশাসক পদে বসানো হয়েছে উত্তম-বিরোধী রাজীব দালালকে। এর পরে দলের একাধিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি উত্তমকে। ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, তিনি ক্ষুব্ধ এবং সম্মান না-পেলে দল ছাড়তে পারেন। তবে উত্তম নিজে বলছেন, “আমি তৃণমূলেই আছি আজও। কাজেই এখন অন্য দল নিয়ে কথা বলব না।”

যদিও জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, “এ সবের প্রভাব নদিয়া এবং রাজ্যের কোথাও পড়বেনা। ভোট হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে।” আবার বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অশোক চক্রবর্তী বলছেন, “বিধানসভা ভোটেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টের পাবেন মানুষ তাঁকে কতটা ঘৃণা করছেন। সকলেবিজেপির দিকেই যাচ্ছেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র কথায়, “বিজেপি এবং তৃণমূল যে সমার্থক, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। আজ যিনি তৃণমূল, কাল তিনি বিজেপি। কাজেই এই দুইয়ের বিরুদ্ধে যে শক্তি তারাই ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।”

এ দিন অমিত শাহের সভার পরে বিজেপি-পন্থী মতুয়া সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মুকুটমনি অধিকারি বলেন, “খুব তাড়াতাড়িই জেলার মতুয়া প্রধান এলাকায় অমিত শাহ সভা করবেন। এর আগে মতুয়া পরিবারের বাড়িতেও গেছেন তিনি। মতুয়াদের পাশে তাঁরা আছেন।” আবার তৃণমূল-ঘেঁষা মতুয়া সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রমথরঞ্জন বোসের বক্তব্য “শাহ বা অন্য বিজেপি নেতারা যাই করুন না কেন। মতুয়ারা বুঝে গেছেন তাঁদের জন্য কাজ করছে রাজ্য সরকারই। তাঁরা বিজেপিকে পরিত্যাগ করছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah BJP TMC Panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy