Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ষোলো বছর ধরে শিকলে বাঁধা ‘অসুস্থ’ নাসিমা

যে খুঁটিতে বাঁধা ছাগল, সেই খুঁটিতেই বেঁধে রাখা হয়েছে নাসিমা খাতুনকে।

বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা নাসিমা। নিজস্ব চিত্র

বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা নাসিমা। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১৪
Share: Save:

যে খুঁটিতে বাঁধা ছাগল, সেই খুঁটিতেই বেঁধে রাখা হয়েছে নাসিমা খাতুনকে।

গত ১৬ বছর ধরে বেঁধে রাখা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন বছর কুড়ির ওই তরুণীকে। শমসেরগঞ্জের চাচন্ড গ্রামের ওই তরুণীর বয়স যখন চার বছর। তখন এক বার বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে গিয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। আত্মীয়-পরিজনের বাড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে শেষ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ড থেকে পরিবারের লোকজন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

এর পরেও কাউকে কিছু না জানিয়ে বেশ কয়েক বার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। তার পর থেকেই শিকলে বেঁধে রাখা হয় তাঁকে।

কখনও বাম হাতে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়, কখনও বাঁধা পড়ে ডান হাত। মা জাহানারা বিবি বলছেন, ‘‘জন্মানোর পরে এমনটা ছিল না। তবে ছোট থেকেই কথা বলতে পারত না। চার বছর বয়স হলে বুঝতে পারি মেয়ে সুস্থ নয়। এর পরে চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বহরমপুরে মানসিক হাসপাতালে। ছ’মাস মতো চিকিৎসাও চলে। কিন্তু টানাটানির সংসারে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পারিনি।’’

আরও পড়ুন: ডাকাত সন্দেহে পুলিশের ধাওয়া, গুলিতে হত যুবক

পেশায় বিড়ি শ্রমিক বাবা আব্দুল হক বলছেন, ‘‘ছোট থেকেই সুযোগ পেলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেত। এক বার পালিয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে খুঁজে নিয়ে আসতে হয়েছে তাকে।’’ একে সুস্থ নয়, তার উপরে নাসিমা এখন তরুণী। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাবা-মা হিসেবে ‘আশঙ্কা’ কাজ করছে। অসহায়তা প্রকাশ করে বাবা-মা একযোগে জানান, বেঁধে রাখা ছাড়া উপায় নেই। কখন যে কী হয়ে যায়! মা জাহানারা বলছেন, ‘‘এত বড় মেয়েকে এ ভাবে কেউ ছাগলের সঙ্গে খুঁটিতে বেঁধে রাখে? কিন্তু ভয় হয়, যদি আবার পালিয়ে যায়। বাঁধা থাকলে অন্তত চোখের সামনে মেয়েটাকে দেখতে তো পাব।’’ নাসিমার এক বৌদি জামেলা বিবি। বলছেন, “এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে ১১ বছর আসা হল আমার। সেই দিন থেকেই ননদকে দেখছি হাতে শিকল বাঁধা অবস্থায়। তবে বোধশক্তি কম হওয়ায় বাড়ির কাউকে কোনও রকম বিরক্ত না করে শিকল বাঁধা অবস্থায় চুপটি করে বসে থাকে। দেখে মায়া হয়। তবে যখনই দেখি মুখে একটা সরল হাসি লেগেই রয়েছে। ওই হাসি দেখলে মন ভাল হয়ে যায়।’’

আরও পড়ুন: সীমান্তের মন বুঝতে বাংলা ক্লাস বিএসএফে

গ্রামীণ চিকিৎসক তথা পড়শি রফিক ইসলাম বলছেন, “নাসিমার চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য ওই বিড়ি শ্রমিক পরিবারের নেই। তাই বিনা চিকিৎসায় মেয়েকে এ ভাবে শিকল-বন্দি করে বাড়িতেই ফেলে রেখেছেন। বিষয়টি অমানবিক, কিন্তু এ ছাড়া ওই পরিবারের করণীয় কিছু নেই!’’ কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা প্রশাসন যদি ওই তরুণীর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে, তাহলে হয়তো নাসিমার বন্দি-দশা কাটবে! তত দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কী?

অন্য বিষয়গুলি:

Chained Mentally Disabled Samserganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE