Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
মোড়লতন্ত্র

সালিশির পান্ডাদের হদিস পায়নি পুলিশ

নওদা: কারা করেছিল মোড়লি? কারা চেয়েছিল জরিমানা? কে বলেছিল তরুণীকে ১০৮ বার কঞ্চির বাড়ি মারতে? কে মেরেছিল?কে দিয়েছিল তরুণীর চুল কেটে নেওয়ার ফতোয়া? প্রতিটি প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর খুঁজছে পুলিশ। খুঁজছে লোকগুলোকেও।

ঘরে ফেরেননি নিগৃহীতা তরুণী। বাড়ির সামনে চরছে ছাগলছানা।

ঘরে ফেরেননি নিগৃহীতা তরুণী। বাড়ির সামনে চরছে ছাগলছানা।

নিজস্ব চিত্র
সেবাব্রত মুখোপাধ্যায় শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১০
Share: Save:

নওদা: কারা করেছিল মোড়লি?

কারা চেয়েছিল জরিমানা?

কে বলেছিল তরুণীকে ১০৮ বার কঞ্চির বাড়ি মারতে?

কে মেরেছিল?

কে দিয়েছিল তরুণীর চুল কেটে নেওয়ার ফতোয়া?

প্রতিটি প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর খুঁজছে পুলিশ। খুঁজছে লোকগুলোকেও।

বুধবারই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আরও এক জনকে পাকড়াও করা হয়। তাদের বহরমপুর আদালতে তোলা হলে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও অন্তত পাঁচ জনকে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে।

কারা ধরা পড়ল?

তরুণী নির্দিষ্ট করে সাত জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। আরও পঞ্চাশ জন ঘটনাস্থলে ছিলেন বলেও জানানো হয়েছে। যাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন, সেই তালিকায় উপরের দিকে আছে দু’টি নাম— স্থানীয় ঠিকাদার সাহাবুদ্দিন শেখ এবং তরুণীর এক নিকটাত্মীয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, এই সাহাবুদ্দিনই তরুণীর চুল কাটার ফতোয়া দিয়েছিল তাঁর স্বামীকে। আর নিকটাত্মীয়ের নির্দেশে এক যুবক তাঁকে কঞ্চিপেটা করে। যদিও তরুণী তাঁর লিখিত অভিযোগে আত্মীয়ের নাম দেননি। যে তিন জন গ্রেফতার হয়েছে তাদের নাম ইমাদুল শেখ, লিটন শেখ ও সফিকুল শেখ। তালিবানি ফতোয়া দেওয়ায় তারাও যুক্ত ছিল। কিন্তু মূল পান্ডারা এখনও অধরা। সাহাবুদ্দিনের হদিস নেই। তদন্তে পাওয়া তথ্য- প্রমাণের ভিত্তিতে তরুণীর আত্মীয়কে পুলিশ ধরবে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। তাঁর নির্দেশে যে যুবক তরুণীকে কঞ্চি দিয়ে পিটিয়েছিল, তাকে ধরা দূরস্থান, তার নামধাম নিয়েও ধন্দ রয়েছে।

অভিযোগে নাম থাকা সত্ত্বেও যাদের পুলিশ রাত পর্যন্ত ধরতে পারেনি, তাদের মধ্যে সাহাবুদ্দিন ছাড়াও রয়েছে হামিদুল শেখ, রহুল শেখ, প্রতিকূল শেখ এবং রেজাউল শেখ। এরা সকলেই মোড়লি করেছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু পুলিশের কাছে খবর পৌঁছনোর পর থেকেই তারা গ্রামছাড়া। পুলিশের অনুমান, জলঙ্গি নদী পেরিয়ে তারা কৃষ্ণনগর বা তেহট্টে গিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে।

যে ‘অপরাধে’ তরুণীকে তালিবানি সালিশি সভায় দাঁড় করানো হয়েছিল, তা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত। নওদার চাঁদপুরের খুবই গরিব পরিবারের ওই তরুণী স্বামী ও তিন ছেলেমেয়েকে ছেড়ে এক গবাদি পশুর কারবারির সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন নতুন করে সংসার পাতবেন বলে। দিন দশেক আগের ঘটনা। কিন্তু নদিয়ার তেহট্টে সেই লোকটিরও পরিবার রয়েছে এবং দু’জনে সেখানে যাওয়া মাত্রই অশান্তি শুরু হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তরুণী বাড়ি ফিরে আসেন। ছেলেমেয়েদের মুখ চেয়ে স্বামী তাঁকে ফিরিয়েও নেন।

কিন্তু তার পরেই আত্মীয়-পড়শির চাপে রবিবার সালিশি সভা বসানো হয়। তারা নিদান দেয়, পরপুরুষের সঙ্গে গিয়ে তরুণীটি ঘোরতর অপরাধ করেছে। শাস্তি হিসেবে ১০৮ ঘা কঞ্চির বাড়ি মারা হয়। ছ’হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। তা দিতে পারবেন না বলে জানানোয় মারধর করা হয় তরুণীর স্বামীকে। শেষে ফতোয়া দেওয়া হয়, তরুণীটি যাতে রূপ দেখিয়ে পুরুষদের বোলাতে না পারেন, তার জন্য তাঁর চুল ছেঁটে দিতে হবে। তাঁর স্বামীকেই সেই কাজ করতে বাধ্য করা হয়। পুলিশের কাছে যাতে তাঁরা না যান, তার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কানাঘুষোয় খবর পেয়ে দু’দিন পরে পুলিশ সক্রিয় হয়।

নওদার বিধায়ক ও জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের খান বলেন, ‘‘পুলিশের আরও আগে সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল।’’ এ দিন তরুণী ও তাঁর স্বামীকে বহরমপুরে আদালতে নিয়ে গিয়ে বয়ান নথিভুক্ত করা হয়। তাঁরা আপাতত সেখানেই আছেন। তাঁদের নিরাপত্তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE