আবার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মন্তব্য রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চিকিৎসক সংগঠন ও জুনিয়র চিকিৎসক ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আরজি কর নিয়ে চিকিৎসক তথা নাগরিকদের আন্দোলন সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সমস্ত নেতা-কর্মীকে। তবুও দমানো যাচ্ছে না তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরকে। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের আবার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল ভরতপুরের বিধায়কের বিরুদ্ধে। বিধায়ক জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে ঠিকই। কিন্তু শাসকদলের তেমনই ভোটার রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের যেমন আন্দোলন করার অধিকার আছে, বাংলায় তৃণমূলেরও ৩ কোটি ভোটার আছে। ১০ হাজার মাঠে নামলে কী হবে, তখন বুঝবে...।’’ পাশাপাশি রোগী পরিষেবা বিঘ্নিত করে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ‘চ্যাংড়ামো’ বলে অভিহিত করেছেন বিধায়ক। এমনকি, তাঁর অবস্থানের জন্য প্রয়োজনে জেলে যেতেও রাজি বলে জানিয়েছেন ওই তৃণমূল বিধায়ক।
তাঁদের সমস্ত দাবি পূরণ না হলে পুজোর পরে আবার আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারেরা। এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে রোগীমৃত্যুর প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার হুমায়ুন বলেছেন, ‘‘ডাক্তারদের দ্বিতীয় ভগবান বলা হয়। সেই ভগবানের আচরণ কী? সিগারেট নিয়ে নাচানাচি করছেন, ঢাক-ঢোল বাজাচ্ছেন। এ সব কি আন্দোলনের নামে চ্যাংড়ামো নয়?’’ জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে আর্থিক সহযোগিতার উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলে তৃণমূল বিধায়কের দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে বিরোধী দলগুলি একত্রিত হয়ে নোংরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার জুনিয়র চিকিৎসকেরা। যাঁরা আন্দোলনের নামে অসভ্যতা শুরু করেছেন।’’ তার পর হুঁশিয়ারি দিয়ে হুমায়ুন বলেছেন, ‘‘সংখ্যায় যদি বিচার করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা তা হলে দেখতে পাবেন, ওঁরা সারা রাজ্যে মাত্র সাড়ে সাত হাজার। সব চিকিৎসক মিলিয়ে সর্ব মোট মাত্র চুরানব্বই হাজার। আমরা তিন কোটি তৃণমূল কর্মী। রাজনৈতিক দল ও জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে বিরোধিতা করব। মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ঘেরাও করব। তাতে আমার যা হওয়ার হোক।’’
এর আগেও চিকিৎসকদের আন্দোলনের সমালোচনা করে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান হুমায়ুন। তাঁর বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। চিকিৎসক সংগঠনের তরফে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়। তার পরেও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরছেন না। হুমায়ুন বলেছিলেন, “আমি যে কথা বলেছিলাম, আমি তাতেই আছি। আমার বক্তব্য একই থাকছে।’’ বিধায়ক আরও বলেন, “আন্দোলন করতে হলে সরকারি জায়গা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আন্দোলন করুক। সরকারের খাব, এসিতে ঘুমোব আর সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলব, এ জিনিস আমি মানতে পারছি না।’’ বস্তুত, চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করে শাসকদলের একাধিক নেতা বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন। কিছু দিন অভিনেতা তথা উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের কটাক্ষে শোরগোল হয়। পরে কাঞ্চন তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চান।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি ছাড়া রাজ্যের কোনও মন্ত্রী আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করবেন না। বিবৃতিও দেবেন না। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা-ই বলেছেন দলীয় নেতাদের উদ্দেশে। তিনি জানিয়েছিলেন, চিকিৎসক তথা নাগরিক সমাজের আন্দোলন নিয়ে ‘কুমন্তব্য’ করা যাবে না। কিন্তু সেই বার্তার পরেও শাসকদলের নেতাদের ‘আলগা’ মন্তব্য থেকে বিরত রাখা যায়নি। হুমায়ুনকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকারের বক্তব্য, ‘‘হুমায়ুন কী বলেছেন, আমি জানি না। দলের অবস্থান ইতিমধ্যেই শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করেছেন। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কিছু বলে থাকলে তার দায় দল নেবে না।’’ অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি শাখারভ সরকারের খোঁচা, ‘‘তৃণমূল নেতাদের কোথায় চিকিৎসকেরা ওঠবস করছেন না বলেই ওঁদের গায়ে যত জ্বালা। ওঁরা তো সবাইকেই মারব বলেন। রাজ্যে তা হলে পুলিশ কেন দরকার?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy