বাড়িতে ওয়েইঞ্জিলা গুঁউই।
ইসলামপুর চক গালর্সের ওইয়েঞ্জিলা গুঁউই। চরকায় সুতো কাটতে-কাটতে হাঁপিয়ে উঠতেন তার বৃদ্ধ ঠাকুমা। হাল ধরতে হত তাকেই। চরকার কেটেই তাদের হাঁড়ি চাপে। বইখাতা কেনার পয়সা জোটে। ওই সুতো কেটেই উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৭৭ নম্বর পেয়েছে ওইয়েঞ্জিলা।
মাত্র ন’বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিল মেয়েটা। মা তাকে ছেড়ে গিয়েছে, তখন বয়স মোটে বারো। আর তার পর থকে অনটনের সংসারে ঠাকুমার হাত ধরেই বেড়ে ওঠা। ষাট ছোঁয়া নারায়ণী গুঁউইয়ের মন ভেঙে গিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু তাঁরও সম্বলর নাতনিই। দিনে কেজি দেড়েক রেশমের সুতো কেটে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা রোজগার। নারায়ণী কথায়, ‘‘কী ভাবে যে চলেছে!’’ চক গালর্সের প্রধান শিক্ষিকা গোপা মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা কিছুটা হলেও ওর লড়াইয়ের সঙ্গী ছিলাম। খুব ভাল লাগছে।’’
ওয়েইঞ্জিলার ইচ্ছে, বিশ্বভারতীতে ভূগোল নিয়ে পড়বে। চরকা ঘুরিয়ে সেই ইচ্ছে পূরণ হবে কি?
প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে রোহিত রায়।
প্রতিবন্ধকতা যে শুধু অর্থেরই হয়, তা তো নয়। নিজের পায়ে উঠেই দাঁড়াতে পারে না যে, সে লেখাপড়া করে কী করে!
ব্যাট হাতে ক্রিজে বসেই বোলারকে তাতাচ্ছিল ছেলেটা— “কী রে, দেব উড়িয়ে?” বলটা ছুটে আসতেই কোমরের উপর থেকে শরীরটা অদ্ভূত ক্ষিপ্রতায় আগুপিছু করে সে সপাটে চালালো ব্যাট। নীল বলটা বোলারের মাথার উপর দিয়ে উড়ে মাঠ লাগোয় দোতলা বাড়ির দেওয়ালে আছড়ে পড়ল।
কে বলবে রোহিত রায় নামে এই ছেলের কোমরের নীচের অংশ জন্ম থেকে অসাড়! অথচ প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় উড়িয়েই নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে ৪১৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। বাংলা-সহ চারটি বিষয়ে লেটার মার্কস। তুড়াপাড়ায় তস্যগলির মধ্যে রোহিতের বাবা বাণেশ্বর রায়ের ছোট্ট মুদিখানার দোকান। রোহিত হাঁটতে পারে না। স্কুল বা খেলার মাঠ, গৃহশিক্ষকের কাছে বা অন্য কোথাও যেতে ভরসা বাবা-মা। তাঁদের কোলে চড়েই সে পেরিয়েছে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি। তার বড় ইচ্ছে, ডব্লিউবিসিএস দিয়ে প্রশাসনিক চাকরিতে যোগ দেওয়ার। তার মা রেবা রায় বলেন, “এ বার শুধু কলেজ কেন, পড়াশুনোর জন্য ও যেখানে যাবে, আমাদের কোলে চড়েই যাবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy