বৃক্ষ-পাট্টা। বাঁশের চাঙাড়ি ঘিরে গাছ বাঁচাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। নিজস্ব চিত্র।
গাছ লাগালে প্রাণ বাঁচবে।
বড় খাঁটি কথা।
পাড়ায় পাড়ায় বনসৃজন সপ্তাহের কল্যাণে তথ্য এখন শিশুদেরও জানা। কিন্তু, চারাগাছ বৃক্ষ না হলে প্রাণ বাঁচবে কেমন করে?
প্রতি বছর গাছ লাগিয়ে তার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার পর চারাদের খবর ক’জন রাখেন? অভিযুক্তের তালিকায় নেতা-মন্ত্রী থেকে আম জনতাও রয়েছেন। অযত্ন-অবহেলায় চারাদের হারিয়ে যাওয়াটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেই ছবিতে বদল আনতে যুতসই দাওয়ায় বের করেছে প্রশাসন। তাই ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান’-এর মতো বহু ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়া স্লোগানকে বদলে নিয়েছে তারা। এবার নতুন স্লোগান, ‘বাঁচলে গাছ, বাড়বে আয়।’
বর্ষাতেও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কর্মদিবস তৈরির জন্য বনসৃজনকে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল আগেই। এ বার সেই গাছগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই প্রকল্পের পরিসর আরও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যে সব গাছ লাগানো হবে, রক্ষনাবেক্ষণের জন্য সে গুলিকে জব কার্ডধারীদের পাট্টা দিতে হবে। তার জন্য পাট্টা প্রাপকরা মজুরি তো পাবেনই, পাবেন গাছ এবং গাছের ফল বিক্রির অর্থও। গত বছর পাইলট প্রকল্প সফল হওয়ায় এবার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ‘বৃক্ষ পাট্টা’। প্রতি বছরই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্য জুড়ে প্রচুর গাছ লাগানো হয়। কিন্তু রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ চারাগাছ মরে যায়। কোথাও জলের অভাব, কোথাও আবার ছাগল-গরুর খাদ্য হয় সেগুলি।
রাজ্যে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকারের অফিস থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে জেলায় জেলায় নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। দিব্যেন্দুবাবুর ব্যখ্যা, ‘‘একশো দিনের প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে চারাগাছ লাগানো হচ্ছে। কিন্তু তার অধিকাংশই বাঁচে না। সেই জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশমত গত বছর এ রাজ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বৃক্ষ পাট্টা শুরু করা হয়েছিল। চারাগাছ লাগানোর পর সেগুলির দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জব কার্ডধারীদের।’’ তাতে দেখা গিয়েছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক গাছ বেঁচেছে। তাই এবারে রাজ্যজুড়ে বৃক্ষপাট্টা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এক দিকে সবুজায়ন অন্যদিকে দরিদ্রদের কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে মুলত বর্ষাকালে একসো দিনের কাজের প্রকল্পে চারাগাছ লাগানোর প্রকল্প শুরু হয়েছিল। জবকার্ডধারীরা মজুরি পেলেও সব চারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তাতে এক দিকে টাকা জলে গিয়েছে। অন্যদিকে ধাক্কা খেয়েছে সবুজায়নও।
এবারে রাজ্যের ১৫ হাজার ৩৫৫ কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারে চারাগাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তা ছাড়াও বাঁধের ধার থেকে থেকে শুরু করে খাস জমি, সরকারি খালি জমিতেও গাছ লাগানো হবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৫০-১০০টি গাছ পিছু একজন জব কার্ডধারীকে, অথবা ২০০-২৫০টি গাছ পিছু চার জনের দলকে বৃক্ষপাট্টা দেওয়া হবে। পাট্টা প্রাপকরা আগাছা নির্মূল, গাছে সার দেওয়া, শুখা মরসুমে গাছে জল দেওয়া-সহ রক্ষনাবেক্ষণের কাজ করবেন। সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পাট্টার সময়সীমা থাকবে।
গাছ রক্ষনাবেক্ষনের জন্য মজুরি তো মিলবেই। তার পাশাপাশি ফল ও কাঠের ভাগও পাট্টাপ্রাপকরা পাবেন। প্রতিমাসে সুপারভাইজাররা সরেজমিনে চারাগাছ গুনে দেখবেন। ৯০ শতাংশ গাছ বেঁচে থাকলে পূর্ণ মজুরি মিলবে। ৭৫-৯৫ শতাংশ গাছ বেঁচে থাকলে মজুরী অর্ধেক হবে। ৭৫শতাংশের বেশী গাছ মরলে মজুরী বন্ধ করা হবে। গাছগুলি বড় হওয়ার পর তা থেকে যা আয় হবে, তার ৭৫ শতাংশ উপভোক্তা এবং ২৫ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত পাবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তার ধারে লাগানো ৯০শতাংশ গাছ বেঁচে থাকলে গাছ পিছু দশ টাকা দেওয়া হবে। অন্যান্য জমিতে লাগানো গাছের জন্য জীবিত গাছ পিছু পাঁচ টাকা দেওয়া হবে। তা ছাড়াও ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ গাছ বেঁচে থাকলে সার দেওয়া এবং রক্ষনাবেক্ষণের জন্য রাস্তার ধারের জীবিত গাছ পিছু প্রতিমাসে পাঁচ টাকা এবং অন্যান্য জমিতে লাগানো গাছ পিছু তিন টাকা করে পাবেন উপভোক্তারা। নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে গত বছর ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে নদিয়া জেলায় প্রায় তিন লক্ষ চারাগাছ লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে তার অর্ধেকও আর বেঁচে নেই। এবারে নদিয়া জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দেড় লক্ষ চারা গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের আশা, বৃক্ষ পাট্টা দেওয়ার ফলে এ বার চারারা মাথা তুলে দাঁড়াবে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি দল রাজ্যে ১একশো দিনের কাজ খতিয়ে দেখতে এসছিলেন। বর্ধমান জেলায় বৃক্ষপাট্টার পাইলট প্রকল্পের সাফল্য তাঁদের সন্তুষ্ট করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy