সুকন্যা পাল। নিজস্ব চিত্র।
অনটন দমিয়ে রাখতে পারেনি অদম্য জেদকে। প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়ে এ বছর মাধ্যমিকে ৬১৯ পেয়েছে নাকাশিপাড়ার বহিরগাছির সুকন্যা পাল। বাবা বৃন্দাবন পাল পড়শি জেলার বর্ধমানের নাদনঘাটে একটি কাঁসা-পিতলের দোকানের কাজ করেন। মা গৃহবধূ। ধর্মদা সুশীলাবালা হিন্দু হাইস্কুলের ছাত্রী সুকন্যা স্বপ্ন দেখে চিকিৎসক হওয়ার। বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮৪, ইতিহাসে ৮৬, ভূগোলে ৯১, ভৌতবিজ্ঞানে ৮৩, জীবনবিজ্ঞানে ৯০ ও অঙ্কে ৯৫ পেয়েছে সে। নুন আনতে পান্তা ফুরনো পরিবারের মেয়েটি চায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু নিজের স্কুলের বিজ্ঞান নেই। তাই একাদশ শ্রেণীতে মুড়াগাছা হাইস্কুলে ভর্তি হতে হবে। ছোট্ট ঘরে সাফল্যের আনন্দে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে সুকন্যার পরিবারে। তার মা বাসন্তী পাল বললেন, ‘‘দুই ছেলে-মেয়েই পড়াশুনা করে। অনেক কষ্ট করে পড়াচ্ছি ওদের। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও মেয়েকে খুব সাহায্য করতেন।’’ সুকন্যা নিজেও বলছে, ‘‘নবম-দশম শ্রেণিতে বেশিরভাগ বই দিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারা। টাকা-পয়সার টানাটানির দরুন সেভাবে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ পাইনি। স্কুলই ছিল আমার একমাত্র ভরসা।’’ সুকন্যার পরিবারে খুশির পাশাপাশি পাক খাচ্ছে দুশ্চিন্তাও। বাবা বৃন্দাবনবাবু বলছেন, “ বুঝতে পারছি না উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ আসবে কোথা থেকে! তারপরেও তো পড়াশোনার পিছনে হাজার খরচ রয়েছে। এত খরচের ধাক্কা সামলানো আমার পক্ষে সত্যিই সমস্যার।” তাই তিনি মেয়েকে কলা বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সুকন্যা অবশ্য দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। পলেস্তারা খসা দেওয়ালে হেলান দিয়ে সে বলছে, ‘‘সেই ছোট থেকেই নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে আসছি। স্বপ্ন দেখে আসছি মেডিক্যাল নিয়ে পড়ার। যেভাবেই হোক বিজ্ঞান নিয়েই পড়ব। স্বপ্নপূরণ আমাকে করতেই হবে। তার সঙ্গে কোনও আপোস করব না। কিছুতেই না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy