জখম অমিত রায় ও বিপ্লব রায়। —নিজস্ব চিত্র।
শাসকদলের অর্ন্তকলহ থামার কোনও লক্ষনই নেই। নদিয়ার ফুলিয়া এলাকায় তৃণমূলকর্মীরা একাধিকবার নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেই দলীয় কোন্দল আরও একবার প্রকাশ্যে এল। এদিন রাতে নদিয়া জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় ওরফে পিটার ও দলীয় কর্মী বিপ্লব রায়ের মধ্যে মারামারি হয়। ওই ঘটনায় বিপ্লব ও তার জামাইবাবু জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। পিটারের দাবি, ওই দু’জন তাঁকে পিটিয়েছে। তার আরও দাবি, “ওরা রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের লোক। রঘুনাথবাবু ও তার ভাইপোও আমাকে মেরেছে।” দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। পিটার কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে বিপ্লব ও তাঁর জামাইবাবু রানাঘাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “অভিযোগ হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাত এগারোটা নাগাদ ফুলিয়ায় পিটারের বাড়ির সামনে বিপ্লব রায়কে দেখা যায়। তারপর দু’জনের মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, পিটারের লোকজন বিপ্লবকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তারপর বিপ্লববাবু কোনওক্রমে বাড়ি গিয়ে ঘটনার কথা জানান। বিপ্লবাবুর মা রুপালি রায় ও জামাইবাবু পিটারের বাড়িতে যান। রুপালিদেবী বলেন, “ছেলেকে মারার প্রতিবাদ করতেই পিটার ও তাঁর দাদা বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় আমাদের মারে। আমার শ্লীলতাহানিও করে ওরা। আমার জামাইকে মাথায় আঘাত করে।” এরপর শান্তিপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী এসে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। খানিক পরে পিটার বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে বলে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে ভর্তি করানো হয় কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে। শুক্রবার দুপুরে তাঁকে ভর্তি করানো হয় কলকাতার হাসপাতালে। পিটার শুক্রবার বলেন, “বিপ্লব লোকজন এনে বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে গালাগাল করছিল। আমার বাড়ির গেটেও ওরা ধাক্কা মারে। আমার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মী ওদের বাধা দিতে যায়। ওরা ওই পুলিশকর্মীকেও মারে। সেই সময় ওরা আমার বুকেও আঘাত করে।” যদিও রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্টদের দাবি, পিটারকে কেউ আঘাত করেনি। ও অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
ফুলিয়ায় শাসকদলে দু’টি লবি রয়েছে। বিপ্লব রায় শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত। অন্যদিকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের তপন সরকারের লোক বলে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে পিটারের। রঘুনাথবাবু ও তপনবাবুর মধ্যে সম্পর্ক একেবারেই মসৃণ নয়। বছর খানেক আগে পিটার ঘনিষ্ট রঞ্জিত গায়েন খুন হন। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হন রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় পিটার এলাকায় নিজের প্রতাপ বাড়িয়ে নেন। পরে জামিনে রঘুনাথবাবু মুক্ত হলে আবার শুরু হয় নিজেদের মধ্যে বিবাদ। দিনকয়েক আগে, রঘুনাথবাবুর মেয়ের বিয়েতে আসেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত, শান্তিপুরের বিধায়ক তৃণমূলের অজয় দে ও নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বানীকুমার রায়। জেলার রাজনীতিতে শক্তিশালী সকলেই রঘুনাথবাবুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষায় আসায় পিটারের লোকজন খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যান। এছাড়াও তৃণমূলের যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত পিটার। মাস খানেক আগে এলাকারই এক বৃদ্ধার জমি দখলের চেষ্টায় নাম জড়ায় পিটারের। তখন লোকজন তাঁর বিরুদ্ধে অভিষেকের বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তারপর থেকে তিনি খানিকটা বেকায়দায় পড়েছেন বলে দলের একাংশের মত। কিছুদিন আগে অবশ্য পিটারের নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণ একজন পুলিশকর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খানিকটা বেকায়দায় পড়েছিলেন পিটার। নিজেদের মধ্যে অষ্টপ্রহর ঠান্ডা লড়াই-এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে একে অপরের বিরুদ্ধে চড়াও হল। রঘুনাথবাবু এই ঘটনা সম্পর্কে বলছেন, “বিপ্লব ও তার জামাইবাবুকে দেখতে আমি হাসপাতালে যাই। পিটার উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে এই ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে দিল।” দলীয় এই অর্ন্তবিবাদ নিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, “দলের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy