থমকে অস্ত্রোপচার। —প্রতীকী চিত্র।
দুর্ঘটনায় পায়ের আঙুল ভেঙে গিয়েছে বছর ১৪-র তৌসিফ রানার। ডোমকলের এক অস্থি-শল্য চিকিৎসক তার দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন। ওই কিশোরের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় ওই পরিষেবার সুযোগ পাচ্ছেন না তাঁরা।
তৌসিফের পরিবার সূত্রে খবর, রবিবার দুর্ঘটনার পর তাকে ডোমকলের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় তার চিকিৎসা থমকে রয়েছে। শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে। তবে তৌসিফের দুর্ভোগ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জেলা জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় চূড়ান্ত বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোক। অনেক জটিল অস্ত্রোপচার থমকে রয়েছে।
কিডনির সমস্যা রয়েছে এমন অনেক রোগীকে নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হয়। অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে অনেক নার্সিংহোমেই ডায়ালিসিস পরিষেবা বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট না থাকার কারণে। রোগীদের আত্মীয়দের দাবি, নার্সিংহোমের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাল এবং ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়েও ভোগান্তি হচ্ছে তাঁদের। রক্ত মজুত থাকলেও তা পাচ্ছেন না অনলাইনে কাজকর্ম কার্যত বন্ধ থাকায়। ডোমকলের এক রোগীর আত্মীয় নাজমুল ইসলাম বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে মেয়ের অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল একটি নার্সিংহোমে। রবিবার থেকে মেয়ে সেখানে ভর্তি হয়ে পড়ে আছে। কিছুই করতে পারছি না। কবে এই পরিস্থিতি বদলাবে,
কে জানে।’’ ডোমকলেরই আর এক বাসিন্দা খন্দকার ওমর ফারুক বলেন, ‘‘মঙ্গলবার ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম সেখানে রক্ত মজুত থাকার পরেও নথি সংক্রান্ত কাজকর্ম করা যাচ্ছে না বলে রোগীরা রক্ত পাচ্ছেন না।’’ তবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে সমস্ত পরিষেবাই স্বাভাবিক আছে।
জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘বর্তমানে স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেকাংশে ইন্টারনেট নির্ভর। তিন দিনের বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট না থাকায় সেই পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। কোনও রকমে ‘ম্যানুয়ালি’ কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। কোন কিছুই অনলাইনে আপলোড করা যাচ্ছে না।’’ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ইন্টারনেট পরিষেবা (ডেডিকেটেড ইন্টারনেট লাইন) চালু থাকায় সেখানে রোগী বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। তবে জেলার বিভিন্ন মহকুমা হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলিকে ভুগতে হচ্ছে।
ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের সুপার সৌরভ শীল বলেন, ‘‘বর্তমানে যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবা ইন্টারনেট নির্ভর। ইন্টারনেট না থাকায় আমরা কোনও নথিই আপলোড করতে পারছি না। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নিতে এবং স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে রোগী ভর্তি ইন্টারনেট ব্যবহার করে হয়। এখন তা হাতে লিখে (ম্যানুয়ালি) করা হচ্ছে।’’ বহরমপুরের একটি নার্সিংহোমের ম্যানেজার শ্যামসুন্দর অধিকারী বলেন, ‘‘ইন্টারনেট না থাকার কারণে ডায়ালিসিসের মতো জরুরি পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে আমাদের। রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।’’ জেলার প্রগ্রেসিভ নার্সিংহোম হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসানুজ্জামান বলেন, ‘‘ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা প্রাপকরা নার্সিংহোমে এলে আমরা তাঁদের সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’’
তবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের আমাদের এখানে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়নি। কারণ, আমাদের হাসপাতালে একটি ডেডিকেটেড ইন্টারনেট লাইন রয়েছে। তাতে রোগী ভর্তি, তাঁদের ছুটি দেওয়া ছাড়াও বহির্বিভাগের টিকিট কাটা হচ্ছে। বাকি বিভাগগুলিতে ইন্টারনেট নেই। তবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে চালু ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মেডিক্যালে ডায়ালিসিস থেকে শুরু করে ব্লাড ব্যাঙ্কসহ সব ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy