Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

লালবাগের তাণ্ডব, দায় এড়াচ্ছে তৃণমূল

বড়দিনের উৎসবের মধ্যেই তৃণমূল ও সিটুর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল লালবাগের হাজারদুয়ারি চত্বর। হামলা, পাল্টা হামলা, বোমাবাজিতে বিপাকে পড়লেন পর্যটকেরা। ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সিটুর অভিযোগ, মোটরবাইকে চড়ে এসে সিটু অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ টাঙ্গা চালক ইউনিয়ন কার্যালয়ে হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত এক দল দুষ্কৃতী। ভাঙচুর চালানো হয়, মারধরও করা হয় কয়েক জন টাঙ্গা চালককে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে টাঙ্গা চালকেরা পাল্টা তেড়ে গেলে দুষ্কৃতীরা পালায়।

শুক্রবার লালবাগের রাস্তায় সিটুর প্রতিবাদ মিছিল।

শুক্রবার লালবাগের রাস্তায় সিটুর প্রতিবাদ মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লালবাগ শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৫
Share: Save:

বড়দিনের উৎসবের মধ্যেই তৃণমূল ও সিটুর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল লালবাগের হাজারদুয়ারি চত্বর। হামলা, পাল্টা হামলা, বোমাবাজিতে বিপাকে পড়লেন পর্যটকেরা।

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সিটুর অভিযোগ, মোটরবাইকে চড়ে এসে সিটু অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ টাঙ্গা চালক ইউনিয়ন কার্যালয়ে হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত এক দল দুষ্কৃতী। ভাঙচুর চালানো হয়, মারধরও করা হয় কয়েক জন টাঙ্গা চালককে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে টাঙ্গা চালকেরা পাল্টা তেড়ে গেলে দুষ্কৃতীরা পালায়। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক পরে ফের ঘটনাস্থলে এসে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তারা হাজারদুয়ারি চত্বরে দাপিয়ে বেড়ায়। এলোপাথাড়ি গুলি চালায় এবং বোমাবাজি করে বলেও অভিযোগ। গোলমালে আহত বাইক-বাহিনীর তিন জনকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

মুর্শিদাবাদ থানায় সিটু-র তরফে ১৮ জন এবং তৃণমূলের তরফে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ সুপার সি সুধাকর শুধু বলেন, “অপ্রীতিকর ঘটনা। পুলিশ তদন্ত করছে।” এ দিন বিকেলে দু’পক্ষই মুর্শিদাবাদ শহরে ‘প্রতিবাদ মিছিল’ বের করে সিটু, অন্য দিকে ‘শান্তি মিছিল’ করে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ টাঙ্গা চালক ইউনিয়নের সম্পাদক মনু শেখের অভিযোগ, “পর্যটকদের ভিড় থাকায় সারা দিন টাঙ্গা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে কয়েক জন চালক সিটু অফিসে বসে ছিলেন। আচমকা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই অফিসে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে এবং আমাদের মারধর করে। অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়।”

বড়দিনের সন্ধ্যায় এই গোলমালে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পর্যটকেরা। কেউ হোটেলে বা কেউ দোকানে ঢুকে লুকিয়ে পড়েন। রেস্তোরাঁয় খাবারের অর্ডার দিয়েও না খেয়ে হোটেলে ফিরে যান অনেকে। স্থানীয় ব্যবসায়ী শিবরাম চৌধুরী বলেন, “তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে না গেলে বিপদ আছে জানিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। এর পরে গুলি চালাতে-চালাতে মোটরবাইকে চড়ে চলে যায়।” স্থানীয় চায়ের দোকানি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “কী যে হল, সেটাই আমার কাছে পরিষ্কার নয়। তবে মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীরা একের পর এক গুলি চালাতে-চালাতে চক মোড়ের দিকে চলে যায়।”

গোলমালের পরেই সিটু মিছিল করে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। লালবাগ চক মোড়ে পথ অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী জয়দেব সাহা বলেন, “এলাকায় গুলির ফাঁকা খোল পড়ে ছিল। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।” লালবাগ ব্যসায়ী সমিতির সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হলে লালবাগে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসায়ীদের।” সিটু-র জেলা সম্পাদক তুষার দে-র অভিযোগ, “২০১১ সালে একই ভাবে ওই কার্যালয় দখলের চেষ্টা করেছিল তৃণমূল। সফল হয়নি। পর্যটনের মরসুমে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির ফল হবে মারাত্মক।”

সত্যিই কি সিটু অফিস দখল করতে হামলা চালানো হয়েছিল?

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, স্থানীয় এক হেরোইন আসক্ত যুবক তৃণমূলের এক নেতার ভাইপোকে চড় মেরে তাঁর মোবাইল কেড়ে নিয়েছিল। নেতার ভাইপো কাকার নাম বলে হুমকি দিতে গেলে মাদকাসক্ত যুবক পাল্টা সিটু নেতা মনু শেখের নাম বলে। তার পরেই মনু শেখের খোঁজে মোটরবাইক বাহিনী এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনও দাবি করেন, “একটি ব্যক্তিগত ঘটনা থেকেই ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে শুনেছি। এর সঙ্গে তৃণমূল কোনও ভাবেই জড়িত নয়।”

ঘটনার পর থেকেই ওই মাদকাসক্ত যুবক বেপাত্তা। সিটু নেতা মনু শেখ আবার বলেন, “আমার নাম কেন উঠে এল, সেটাই জানি না।” এ দিন সিটুর প্রতিবাদ মিছিলে ছিলেন মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সিপিএম সাংসদ বদরুদ্দোজা খান। তাঁর দাবি, “মুর্শিদাবাদ পুরসভার ভোটের দিকে তাকিয়ে তৃণমূল এখন থেকেই সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছে।” জেলা কংগ্রেস সম্পাদক তথা শহরের নেতা বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, “অশান্তি পাকানোর পরে তৃণমূল শান্তি মিছিল বের করায় লালবাগের মানুষ হাসাহাসি করছে। এ তো ‘ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি’ বলার সামিল।” মান্নান হোসেন অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “তৃণমূল এই ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয় না।”

অন্য বিষয়গুলি:

lalbagh hazarduari tmc citu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE