Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বেহাল রাস্তায় নাজেহাল বাসিন্দারা

এলাকাবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে সীমান্ত উন্নয়ন তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছিল কানুপুর-বহুতালি সড়ক। কিন্তু বছর পাঁচেক না যেতেই শোচনীয় অবস্থা সড়কের। জায়গায় জায়গায় গর্ত। বর্ষার জল জমে কোথাও কোথাও তা জলাশয়ের রূপ নিয়েছে।

বেহাল অবস্থা কানুপুর-বহুতালি সড়কের। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বেহাল অবস্থা কানুপুর-বহুতালি সড়কের। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫৬
Share: Save:

এলাকাবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে সীমান্ত উন্নয়ন তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছিল কানুপুর-বহুতালি সড়ক। কিন্তু বছর পাঁচেক না যেতেই শোচনীয় অবস্থা সড়কের। জায়গায় জায়গায় গর্ত। বর্ষার জল জমে কোথাও কোথাও তা জলাশয়ের রূপ নিয়েছে। নিত্য ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো রয়েছেই, গত এক বছরে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ৬ জন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোটের সময় নেতারা রাস্তা সারানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে রাস্তার হাল একই থেকে গিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধান চন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাস্তাটি নিমার্ণের জন্য শিলান্যাস করা হয়েছিল। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে চার দশকেরও বেশি সময়। ওই এলাকা থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন আরএসপির প্রার্থীরা। তবুও শিলান্যাসের গেরো কাটেনি। শেষ পর্যন্ত সাংসদ ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সীমান্ত উন্নয়ন তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫.৫০ মিটার চওড়া সড়কটি তৈরি করা হয়।

বহুতালির বাসিন্দা শিমুল রবিদাস বলেন, “ভোটের প্রচারে প্রথমবার এসে রাস্তার না থাকার দুর্ভোগের চেহারাটা নিজের চোখে দেখে গিয়েছিলেন প্রণববাবু। তারপরেই সীমান্ত উন্নয়ন তহবিল থেকে দফায় দফায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়ে দেন।” রাজ্যের পূর্ত (সড়ক) দফতরকে সড়কটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর পাঁচেক যেতে না যেতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে সেই রাস্তা। বহুতালি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের সাইমা ইয়াসমিন বেনজির বলেন, “গত এক বছরে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৬ জনের। আহতের সংখ্যা অগুনতি। বহুবার বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ, মৃতদেহ আটকে রেখে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আমাকে পঞ্চায়েতের কাজে প্রায়ই আহিরণে ব্লক অফিসে যেতে হয়। প্রায়ই দেখি রাস্তার উপর ট্রাক্টর, লরি মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন হারোয়া, বহুতালির অন্তত ২৬ টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দাদের ওই রাস্তা ধরেই দিনান্তে বাড়ি ফিরতে হয়। ওই রাস্তার পাশে রয়েছে ৪টি উচ্চমাধ্যমিক ও একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাছাড়াও ওই রাস্তা ধরে সহজেই ঝাড়খণ্ড বা বীরভূমে চলে যাওয়া যায়। এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তা সারানোর গরজ কারও নেই। লালুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সন্তোষ দত্ত বলেন, “ঝুঁকি নিয়ে ছাত্ররা সাইকেলে যাতায়াত করে। বহুবার দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছে তাদের। এমনকি ২০১৩ সালে দুর্ঘটনায় আহত ৮ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে জঙ্গিপুর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। “সড়ক জুড়ে গর্ত তো নয় যেন আস্ত এক একটা পুকুর। শুধু মাছ ছাড়তেই বাকি” বক্রোক্তি সন্তেষবাবুর।

রাস্তার অবস্থা যে যথেষ্ট বেহাল তা মানছেন পূর্ত (সড়ক) দফতরের জঙ্গিপুরের সহকারি বাস্তুকার রাজেন্দ্র প্রসাদ মণ্ডলও। তিনি বলেন, “সত্যি খুব খারাপ অবস্থা সড়কটির। আসলে সড়কটির যা ধারণ ক্ষমতা তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য দ্রুত সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিদিন যে সংখ্যক পাথর-বালি বোঝাই লরি যায় তাতে রাস্তা ভাল না থাকারই কথা। তবে পূর্ত দফতর থেকে সড়কটি নিয়ে কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

গত বৃহস্পতিবার সড়কটির হাল ঘুরে দেখেন জেলার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শুভঙ্কর মাজি। তবে পূর্ত দফতরের কাজ শুরু হওয়ার আগে যে সড়কটি সারানো উচিত তা মানছেন সুতি-১ বিডিও দীপঙ্কর রায়। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের সীমান্ত উন্নয়ন তহবিল থেকে দেড় কোটি টাকা এসেছে রাস্তাটি মেরামত করার জন্য। শীঘ্রই টেন্ডার ডেকে কাজ শুরু হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

bad roads harrassment inhabitants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE