Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ধৃত তিন দুষ্কৃতী, তবুও উদ্বিগ্ন বালিয়াডাঙা

উদ্বেগ যেন পিছু ছাড়ছে না মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙার। বার বার থানায় অভিযোগ জানিয়েও দুষ্কৃতীদের ধরছিল না পুলিশ। সেই ক্ষোভে বুধবার সকালে থানায় গিয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় গ্রামের লোকজন। গত দেড় বছর ধরে যা হয়নি, ‘চাপে’ পড়ে বুধবার রাতেই দুষ্কৃতীদের তিন চাঁইকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এসডিপিও (তেহট্ট) সুনীল সিকদার বলেন, “প্রথমে মাধপুরের জহুর শেখ ও বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই গ্রামেরই এরসাদ শেখকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্র ওরাও ধরা পড়ে যাবে।”

বাড়ির সামনে ভিড় মহিলাদের। বৃহস্পতিবার কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বাড়ির সামনে ভিড় মহিলাদের। বৃহস্পতিবার কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরুটিয়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৩
Share: Save:

উদ্বেগ যেন পিছু ছাড়ছে না মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙার। বার বার থানায় অভিযোগ জানিয়েও দুষ্কৃতীদের ধরছিল না পুলিশ। সেই ক্ষোভে বুধবার সকালে থানায় গিয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় গ্রামের লোকজন। গত দেড় বছর ধরে যা হয়নি, ‘চাপে’ পড়ে বুধবার রাতেই দুষ্কৃতীদের তিন চাঁইকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এসডিপিও (তেহট্ট) সুনীল সিকদার বলেন, “প্রথমে মাধপুরের জহুর শেখ ও বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই গ্রামেরই এরসাদ শেখকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্র ওরাও ধরা পড়ে যাবে।”

কিন্তু তারপরেও ভরসা পাচ্ছে না বালিয়াডাঙা। বুধবারের পর থেকে উদ্বেগ আরও বেড়েছে বই কমেনি। কেন? গ্রামবাসীরা জানান, ধরা তো পড়েছে সাকুল্যে তিন জন। কিন্তু বাকিরা এর বদলা নিতে গ্রামে এসে যে কিছু একটা অঘটন ঘটাবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? তাছাড়া পুলিশও তো বদলা নিতে মুখিয়ে রয়েছে। বুধবারে পুলিশকে মারধর ও থানায় ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ মোট দু’টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

সেই ঘটনায় পুলিশ বুধবার রাতে মুরুটিয়ার মাঠপাড়ার সুরেশ মণ্ডল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। সুরেশের মা অসীমা মণ্ডলের দাবি, “আমার ছেলে ঘটনার সময় মাঠে কাজ করছিল। কিন্তু পুলিশ রাতে এসে বাড়ির তালা ভেঙে ওকে তুলে নিয়ে যায়।” গ্রামবাসীদের উদ্বেগের এটাও একটা অন্যতম কারণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, “আমরাও হাল ছেড়ে দেব না। পুলিশও যদি এ বার অন্যায় কিছু করে তাহলে আমরা দরকার হলে আদালতের দ্বারস্থ হব।”

গ্রামের এমন পরিস্থিতিতে সব ভেদাভেদ ভুলে এককাট্টা হয়েছেন গ্রামবাসীরা। বৃহস্পতিবার গ্রামে ঢুকতেই সেটা টের পাওয়া গেল। মোড়ে মোড়ে রয়েছে মানুষের জটলা। বাড়ির সামনে মহিলাদের ভিড়। গ্রামে কোনও অপরিচিত মুখ দেখলে কিমবা গাড়ির আওয়াজ পেলেই তড়িঘড়ি খবর চলে যাচ্ছে অন্যদের কাছেও।

এ দিন বালিয়াডাঙা বাজারে গিয়ে দেখা গেল সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। পঞ্চায়েত অফিস খোলা ছিল। কিন্তু সেখানেও লোকজন সেভাবে চোখে পড়েনি। পঞ্চায়েতের একপাশের বালিয়াডাঙা উচ্চ বিদ্যালয় কিছুক্ষণ খোলা থাকলেও স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি এতই কম ছিল যে স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। একই কারণে বন্ধ হয়ে যায় লাগোয়া বালিয়াডাঙা বালিকা বিদ্যালয়ও।

বালিয়াডাঙা হাই স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, “এমন একটা পরিবেশে ভয়ে কেউ স্কুলে আসছে না। হাতেগোনা যে ক’জন স্কুলে এসেছিল তারা সকলেই খুব আতঙ্কে ছিল। কখন কী হয়ে যা, সেই ভয়ে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

গ্রামে ঢোকার প্রধান রাস্তার পাশেই বালিয়াডাঙা স্কুলের মাঠ। সেই মাঠে বসে রয়েছে কয়েকশো গ্রামবাসী। তাঁদের চোখে-মুখে অনিদ্রার ছাপ স্পষ্ট। তাঁদের একজনের কথায়, “বুধবারের পর আমাদের ভয় আরও বেড়ে গিয়েছে। আমরা সবাই এককাট্টা হয়ে রাত পাহারা দিচ্ছি।”

আর এক গ্রামবাসীর কথায়, “গ্রামের বাইরে খুব দরকার না হলে কেউ যাচ্ছি না। সকলেই একসঙ্গে থাকছি। পাছে দুষ্কৃতীরা আমাদের কাউকে আক্রমণ করে।” মাঠ ছেড়ে গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল ইটের রাস্তার তিন মাথার মোড়ে মাচায় কিছু মানুষের জটলা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একটাই।

এ দিন স্কুলে না গিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল ষষ্ঠ, অষ্টম ও নবম শ্রেণির জনাকয়েক পড়ুয়া। তারা বলে “ক’দিন ধরে গ্রামে যা হচ্ছে, স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছি। আবার রাতেও বেশিক্ষণ জেগে পড়াশোনা করতে পারছি না। সকাল সকাল আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থায় স্কুলেও কেউ আসছে না বলে ক্লাস না হয়ে ছুটি হয়ে যাচ্ছে।”

কিছুটা আক্ষেপের সুরে বালিয়াডাঙার মহিলারা বলছেন, “বারবার বলার পরেও পুলিশ গ্রামে বা দখল হওয়া ওই জমিতে একবারও আসেনি। পুলিশ আগেই যদি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নিত, তাহলে এমন ঘটনা কিছুতেই ঘটত না।”

অন্য বিষয়গুলি:

murutia baliadanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE