Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
পিপলস্‌ ব্যাঙ্ক

সমবায় ব্যাঙ্কের মনোনয়ন ঘিরে সিপিএম-তৃণমূল চাপানউতোর

মনোনয়নপর্বের প্রথম দিনই বাদানুবাদে জড়াল সিপিএম- তৃণমূল। বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনাও ঘটল। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরা দলের কয়েকজন নেতা- কর্মীকে মারধরও করেছে। অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল

ব্যাঙ্কের সামনে দু’পক্ষের বচসা। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কের সামনে দু’পক্ষের বচসা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

মনোনয়নপর্বের প্রথম দিনই বাদানুবাদে জড়াল সিপিএম- তৃণমূল। বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনাও ঘটল। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকেরা দলের কয়েকজন নেতা- কর্মীকে মারধরও করেছে। অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে মেদিনীপুর শহরের পিপলস্ কো- অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মনোনয়নপর্ব। অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে এদিন সকাল থেকে ব্যাঙ্কের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ব্যাঙ্কের আশপাশেও পুলিশ নজরদারি চালায়। তাও বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটে। অবশ্য সমবায় দফতরের দাবি, তেমন কোনও গোলমাল হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিষ্ট্রার অফ কো- অপারেটিভ সোসাইটি (এআরসিএস) মদনমোহন ঘোষ বলেন, “ওই ব্যাঙ্কের মনোনয়নপর্বে তেমন কোনও গোলমাল হয়েছে বলে শুনিনি। অন্তত, আমার কাছে এমন কোনও খবর নেই।” তাঁর দাবি, এদিন মনোনয়নপর্ব সুষ্ঠু ভাবেই হয়েছে।

২০১০ সালের ৫ জানুয়ারি পিপলস্ ব্যাঙ্কের নতুন পরিচালন সমিতি গঠন হয়েছিল। সেই হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি। ’৯৩ সাল থেকেই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি ছিল বামেদের দখলে। বাম-সমর্থিত প্রার্থীরা গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে লড়াই করেছেন। পরিচালন সমিতির মেয়াদ ফুরনোর পরও কেন ভোট হচ্ছে না, সম্প্রতি এই প্রশ্ন তুলে সরবও হয় বামেরা। বিদায়ী বোর্ডের বামপন্থী সদস্যদের দাবি, বিদায়ী পরিচালন সমিতি গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের কো- অপারেটিভ নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন ঘোষণার জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু প্রায় দেড় মাস প্রশাসন এই বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। শেষমেশ ৭ নভেম্বর নির্বাচন আধিকারিক নিয়োগ করে। নির্বাচন আধিকারিক বিদায়ী বোর্ডের মেয়াদের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে উদ্যোগী হন। বিজ্ঞপ্তিও দেন। ২০ নভেম্বর শাসক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন আধিকারিককে ঘেরাও করে বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। নির্বাচন আধিকারিক সেই চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ওই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেন। অবশ্য চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। সম্প্রতি ব্যাঙ্কে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ হয়। এরপরই নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির নির্বাচন। সবমিলিয়ে ৫১ জন প্রতিনিধি (ডেলিগেট) নির্বাচিত হবেন। বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে মনোনয়নপর্ব। চলবে পরশু, শনিবার পর্যন্ত। মনোনয়নপর্ব ঘিরে এদিন সকাল থেকেই ব্যাঙ্কের সামনে উত্তেজনা ছিল। সিপিএম- তৃণমূল দু’দলের নেতা- কর্মীরাই আশপাশে ভিড় করেন। তৃণমূল শিবিরের ভিড়ে যেমন দেখা গিয়েছে সঞ্জিত সরকার, সৌরভ বসুদের। তেমন সিপিএম শিবিরের ভিড়ে দেখা গিয়েছে সারদা চক্রবর্তী, সুকুমার আচার্যদের।

দুই দলের কর্মী- সমর্থকেরাই মাঝেমধ্যে বাদানুবাদে জড়িয়েছেন। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, মনোনয়নপর্ব শুরুর কিছু পর থেকেই ইচ্ছাকৃত ভাবে গেটের কাছে ভিড় করেন তৃণমূলের লোকেরা। যাতে দলের কর্মী- সমর্থকেরা মনোনয়নপত্র তুলতে না- পারেন। দীর্ঘক্ষণ জোর করে গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। মাঝেমধ্যে লাইনও আটকে রাখা হয়। এক সময় সুকুমার আচার্য, মানস মিদ্যা সহ দলের কয়েকজন নেতা- কর্মীকে মারধরও করা হয়। একাধিক মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেওয়া হয়। চেয়ার ভাঙচুরেরও অভিযোগ ওঠে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা সিপিএমের জেলা নেতা কীর্তি দে বক্সীর অভিযোগ, “শাসক দল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ব্যাঙ্কের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।” তাঁর কথায়, “আসলে ওরা ভয় পাচ্ছে। বুঝতে পারছে মানুষ ওদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।”

সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তীও বলেন, “বিদায়ী পরিচালন সংস্থার মেয়াদ শেষের আগেই নির্বাচনের মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের গণতান্ত্রিক মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠন করার কথা। এটা আগের সমস্ত নির্বাচন পর্যন্ত হয়ে এসেছে। এ বার তা হল না কেন? ” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি তথা দলের শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তী বলেন, “মনোনয়নপর্বে গোলমালের কোনও ঘটনাই ঘটেনি।” একধাপ এগিয়ে শহর তৃণমূলের আরেক নেতা সঞ্জিত সরকার বলেন, “এক সময় বলা হল, আমরা না কি শহর বাদে অন্যত্র ভোট করানোর চেষ্টা করছি। এখন বলা হচ্ছে, অশান্তি করছি। কোনও গোলমাল হয়নি। কাউকে মারধরও করা হয়নি। আমরাও চাই, সুষ্ঠু ভাবে ভোট হোক।”পুলিশেরও দাবি, শহরের এই ব্যাঙ্কের মনোনয়নপর্বে তেমন কোনও গোলমাল হয়নি। তাদের আশ্বাস, অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনে ওই এলাকায় বাড়তি পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE