Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মিষ্টি-ঐতিহ্যে অনন্য লালগড়

বুটের নাড়ু, গুড়ের নাড়ু কিংবা মতিচুর লাড্ডু তিন টাকায়! রশেবশে থাকা দরবেশেরও প্রতি পিস মিলবে ওই তিন টাকায়! আকারে একটু বড় হলে অবশ্য প্রতি পিস পাঁচ টাকা। জঙ্গলমহলের জনপদগুলিতে উৎসবের দিনে এমনই রসালো স্থানীয় মিষ্টির দেখা মেলে। এই মিষ্টি সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি লালগড়ের মিষ্টির স্বাদ নিতে পুজোর দিনগুলিতে স্থানীয় দোকান দোকানে ক্রেতাদের ভিড় জমে।

পসরা সাজিয়ে। নিজস্ব চিত্র।

পসরা সাজিয়ে। নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
লালগড় শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪৫
Share: Save:

বুটের নাড়ু, গুড়ের নাড়ু কিংবা মতিচুর লাড্ডু তিন টাকায়! রশেবশে থাকা দরবেশেরও প্রতি পিস মিলবে ওই তিন টাকায়! আকারে একটু বড় হলে অবশ্য প্রতি পিস পাঁচ টাকা। জঙ্গলমহলের জনপদগুলিতে উৎসবের দিনে এমনই রসালো স্থানীয় মিষ্টির দেখা মেলে। এই মিষ্টি সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি লালগড়ের মিষ্টির স্বাদ নিতে পুজোর দিনগুলিতে স্থানীয় দোকান দোকানে ক্রেতাদের ভিড় জমে।

চার দশক আগের খাঁদু ময়রার মতো প্রবীণ হালুইকরদের নাড়ু-ঐতিহ্য বহণ করছে বর্তমান প্রজন্মের দীনেশ দাসেরা। ছোলার বেসন থেকে তৈরি হয় বুটের নাড়ু। প্রথমে বেসনের মোটা মোটা ঝুরি ঘিয়ে ভেজে নেওয়া হয়। তারপর ঘন চিনির রসে সেই ঝুরি মিশিয়ে তৈরি হয় বুটের নাড়ু। দেখতে খানিকটা লাড্ডুর মতো। রূপে ও স্বাদে অতুলনীয়! এক সময় বেলুড় মঠ ও মিশনের জন্য বুটের নাড়ু তৈরির বরাত পেতেন স্থানীয় হালুইকরেরা। লালগড়ের খাসতালুকে রাজ পরিবার ও ব্রাহ্মণদের ভদ্রাসন থাকায় এখানকার মিষ্টি-সংস্কৃতি বেশ পুরনো।

উৎসবের মরশুমে লালগড়ের মিষ্টির দোকানগুলিতে যেমন থরে থরে বুটের নাড়ু সাজানো থাকে। তেমনই গুড়ের নাড়ুও লালগড়ের অন্যতম ঐতিহ্যের মিষ্টি। গোলমরিচ মেশানো গুড়ের পাকে ডোবানো বেসনের বোঁদে দিয়ে তৈরি হয় গুড়ের নাড়ু। এ ছাড়া লালগড়ের মিষ্টান্ন ঘরানার তালিকায় রয়েছে মিহিদানা দিয়ে তৈরি মতিচুর লাড্ড, ঝুরিভাজা রসে চুবিয়ে রাজকীয় দরবেশ। ওড়িশার ছানার কেক বা ছানাপোড়াও লালগড়ের হালুইকরেরা তৈরি করেন। তাতে লালগড়ের নিজস্ব স্বাদ রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

লালগড়ের বাসিন্দা লোক সংস্কৃতি গবেষক পঙ্কজ মণ্ডলের কথায়, “কম বয়সে খাঁদু ময়রার দোকানের সামনে দাঁড়ালেই হরেক রকম মিষ্টির সুগন্ধে মনটা ভরে যেত। বুটের নাড়ু মুখে চালান করার জন্য মনটা আনচান করতো। কামড়ে দিলেই অমৃতের স্বাদ! এখনও স্থানীয় দোকানগুলিতে সেই স্বাদ রয়েছে। বর্তমান বাজার দরের তুলনায় দামও কম।”

২০০৯-১০ সালে অশান্তির বছরগুলিতে লালগড়ে মিষ্টির প্রকরণ অনেক কমে গিয়েছিল। বেশির ভাগ মিষ্টির ক্রেতা ছিলেন অভিযানে আসা যৌথ বাহিনীর সদস্যেরা। লালগড়ের স্থানীয় হালুইকরেরা ২০১১ সাল থেকে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছেন। পাশাপাশি, কাঁচামালের দাম বাড়ায় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজও পড়েছে। লালগড়ের এসআই চকের একটি প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানের মালিক দীনেশ দাস বলেন, “গরিব এলাকা। তাই মিষ্টির প্রতি পিসের দাম দাম তিন টাকা থেকে পাঁচ টাকা রাখতে হয়। তবে একশো টাকা কিলো দরেও বুটের নাড়ু, গুড়ের নাড়ু, মতিচুর লাড্ডু বিক্রি হয়। এক কেজিতে ছোট আকারের ৩০-৩৫টা নাড়ু ওঠে। কিলো দরে বড় নাড়ু ওঠে ২০-২১টা। বিজয়ায় এ ধরনের মিষ্টির চল বেশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kingshuk gupta lalgarh pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE