বন্দিদের আধার কার্ড তৈরি শুরু হল মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। প্রায় বারোশো বন্দি রয়েছেন এখানে। এঁদের মধ্যে প্রায় ৭০০ জন সাজাপ্রাপ্ত। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে আবার প্রায় ৫০০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। এঁদের বেশিরভাগেরই আধার কার্ড নেই। একে একে সকলেরই এই পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়া হবে বলে জেল সূত্রে খবর। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার স্বরূপ মণ্ডল বলেন, “আবাসিকদের আধার কার্ড তৈরি শুরু হয়েছে। সংশোধনাগারের মধ্যেই শিবির হচ্ছে।”
জেলের এক সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার এই শিবিরে আসার কথা ছিল মাওবাদী নেত্রী কল্পনা মাইতি ওরফে অনুর। তিনি অবশ্য শিবিরে আসেননি। এ নিয়ে জেলের অন্দরে জোর জল্পনাও ছড়িয়েছে। বন্দি মাওবাদীরা কী আধার কার্ড তৈরি করাতে ইচ্ছুক নন? কারা দফতরের ডিআইজি (মেদিনীপুর) বিপ্লব দাস বলেন, “সবে শিবির শুরু হয়েছে। শিবির শেষ না হলে বলা সম্ভব নয়, কে আধার কার্ড তৈরি করালেন আর কে করালেন না।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলের এক কর্তা অবশ্য বলছেন, “এ ক্ষেত্রে জোরাজুরির ব্যাপার নেই। আমরা আবাসিকদের কার্ড তৈরিতে উত্সাহ দিচ্ছি। এখন কেউ যদি এই কার্ড তৈরি করাতে অনিচ্ছুক হন, সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।”
জেলের এক সূত্রে খবর, প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন বন্দির কার্ড তৈরির জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কে, কোন দিন শিবিরে আসবেন, তা আগে থেকেই জানানো হয়। বৃহস্পতিবারের শিবিরে আসার কথা ছিল মাওবাদী নেত্রী কল্পনা মাইতি ওরফে অনুর। কিন্তু তিনি আসেননি। এতে অবশ্য অন্যায়ের কিছু দেখছেন না মেদিনীপুরের আইনজীবী মৃণাল চৌধুরী। মাওবাদী সন্দেহে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের হয়ে বেশ কয়েকটি মামলায় সওয়াল করেন মৃণালবাবু। শুক্রবার তিনি বলেন, “কেউ যদি আধার কার্ড তৈরি না করান তাতে অন্যায়ের কিছু নেই। কোনও কাজে আধার আবশ্যিক নয় বলে তো দেশের শীর্ষ আদালতই জানিয়ে দিয়েছে।”
আধার নম্বরের ভিত্তিতে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির ব্যবস্থা চালু করেছিল কেন্দ্রের পূর্বতন ইউপিএ সরকার। কিন্তু তখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার তৈরি না হওয়া বা শিবিরে ডাক না পাওয়ার মতো অভিযোগ ওঠে। ক্ষোভ, বিভ্রান্তি তৈরি হয়। নানা সমস্যার জেরে গোটা বিষয়টিও ধামাচাপা পড়ে যায়। এখন নরেন্দ্র মোদী সরকার ফের আধার কার্ড তৈরির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। জানা গিয়েছে, আধার কার্ডের কাজ ফের শুরু করার আর্জি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা ইউআইএআই-এর চেয়ারম্যান নন্দন নিলেকানি। এই আলোচনার ভিত্তিতে সারা দেশে দ্রুত আধার কার্ড প্রকল্প বাস্তবায়িত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী মার্চের মধ্যে এ রাজ্যে পাঁচ বছরের উর্ধ্বে সব নাগরিকের বায়োমেট্রিক তথ্যসংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জাতীয় জনগণনা দফতর। সেই লক্ষ্যেই বিভিন্ন এলাকায় শিবির হচ্ছে। আধার কার্ডের জন্য নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য, ছবি, চোখের মণির ছবি, আঙুলের ছাপ ইত্যাদি (বায়োমেট্রিক তথ্য) সংগ্রহের দায়িত্ব জাতীয় জনগণনা দফতরেরই।
জেলের এক সূত্রে খবর, সব রাজ্যের বন্দিদের জন্য আধার কার্ড তৈরির নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই মতো এ রাজ্যের জেলগুলোতেও শিবির হচ্ছে। জেলের এক কর্তার কথায়, “অনেকে দীর্ঘদিন জেলে থাকেন। পরে মুক্তি পেয়ে বাইরে বেরোনোর পর পরিচয়পত্রের জন্য সমস্যায় পড়েন। তাই আবাসিকদের আধার কার্ড তৈরি করতে উদ্যোগী হয় কারা দফতরই।” অবশ্য বিদেশি বন্দিদের আধার কার্ড হবে না বলেই জেলের ওই সূত্রে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy