বালি খাদানে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের দেহ উদ্ধার হল সুবর্ণরেখা নদীতে। বৃহস্পতিবার সকালে দাঁতনের আঙ্গুয়া গ্রাম পঞ্চয়েতের পানিতুনিয়া গ্রামে নদীর জলে ভেসে ওঠে শশাঙ্ক পড়্যা (২১) নামে ওই যুবকের দেহ। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে শশাঙ্ক নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, খাদানে কাজ করার সময় কোনও ভাবে সুবর্ণরেখার জলে পড়ে গিয়েছিল ওই যুবক। তারপর থেকে তাঁর খোঁজ মেলেনি। যদিও মৃতের দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাঁর পরিবারের লোকেদের পাল্টা দাবি, শশাঙ্ককে খুন করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এ দিন প্রথমে পুলিশে শশাঙ্ককে খুনের অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ প্রথমে তা নিতে অস্বীকার করে। পরে অবশ্য দাঁতন থানার পুলিশ অভিযোগ নিলেও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও মামলা রুজু হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শশাঙ্ক দীর্ঘদিন ধরেই সুবর্ণরেখা নদী থেকে বালি তোলার কাজে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে মিলে সে বালি তোলার ব্যবসা শুরু করে। সেই মতোই গত শনিবার নদী থেকে বালি তোলার কাজ চলছিল। ওই দিন জলে ভাসমান মেশিনের ওপরে দাঁড়িয়ে শশাঙ্ক বালি তোলার কাজ করছিলেন। সেই সময় কোনও ভাবে তিনি নদীতে পড়ে যান বলে স্থানীয়দের দাবি। পুলিশে ঘটনার খবর দেওয়া হয়। অভিযোগ, প্রাথমিক ভাবে তল্লাশির পরেও ওই যুবকের কোনও খোঁজ মেলেনি। এ দিন সকালে হঠাৎ ওই বালি খাদানের কাছে নদীতে যুবকের দেহটি ভাসতে দেখে ছুটে আসেন পরিবারের লোকেরা। তাঁর দেহের ঘাড়ের কাছে রক্তের দাগও পাওয়া গিয়েছে। শশাঙ্কের দাদা বাদল পড়্যার অভিযোগ, “ভাইয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। ভাইকে খুন করে দেওয়া হয়েছে।”
মৃতের পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে দাঁতন থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। মৃতের দাদার অভিযোগ, “আমি থানায় খুনের অভিযোগ লিখে জমা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানায় কর্তব্যরত অফিসারেরা অভিযোগ নিতে চাননি। পুলিশ আমাদের জলে ডুবে মৃত্যুর অভিযোগ করতে বলে। ওদের ঠিক করে দেওয়া বয়ানে সাক্ষর করতেও বলা হয়। যদিও আমি তা করিনি।” দাঁতন থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকেই থানায় আইসি ছিলেন না। যুবকের পরিবারের লোকেদেরও দাবি, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও আইসি-র দেখা পাওয়া যায়নি। পরে ক্যুরিয়ার মারফত ঘটনার কথা জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে জানানো হয় বলে দাবি। তারপর দাঁতন থানার পুলিশ অভিযোগ নেয়। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “মৃতের পরিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে অবশ্যই তা নেওয়া হবে। তাছাড়া অভিযোগ নেওয়া হয়ে থাকলে নিশ্চয় মামলা রুজু হবে। পাশাপাশি তদন্তও শুরু হবে।” মৃতের পরিবারের লোকেরা সরাসরি তাঁকেও অভিযোগ জানাতে পারে বলে জানান তিনি।
বিজেপির দাঁতন মণ্ডল সভাপতি বিবেকানন্দ বিশ্বাস বলেন, “আমাদের মনে হয়েছে, তাঁকে খুন করা হয়েছে। যুবকের পরিবার আমাদের সমর্থক। গ্রামবাসীরা বলেছেন, খুনের পিছনে জড়িতরা তৃণমূলের লোক। তাই পুলিশ তাঁদের আড়াল করতে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করছে।” অবশ্য এ বিষয়ে দাঁতনের ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিক্রম প্রধান বলেন, “সবাই দেখেছে ওই যুবক তেল ঢালতে গিয়ে মেশিনের ওপর থেকে পড়ে গিয়েছে। ময়না-তদন্ত হলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy