Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিশ্রুতিই সার, স্কুলের দুর্দশা দেখলেন সাংসদ

সরকারি ঘোষণা আছে। রয়েছে গালভরা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিও। জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিতে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠনের বাস্তব চিত্রটা কিন্তু অন্যরকম ভাবে ধরা পড়ল খোদ শাসক দলের সাংসদের চোখে! বুধবার জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিতে অলচিকি লিপিতে পঠন পাঠন কেমন চলছে তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বেরিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের তৃণমূল সাংসদ উমা সরেন। এ দিন উমার গন্তব্য ছিল এক সময়ে মাওবাদীদের ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়ি ব্লক এলাকা।

স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

সরকারি ঘোষণা আছে। রয়েছে গালভরা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিও। জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিতে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠনের বাস্তব চিত্রটা কিন্তু অন্যরকম ভাবে ধরা পড়ল খোদ শাসক দলের সাংসদের চোখে!

বুধবার জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিতে অলচিকি লিপিতে পঠন পাঠন কেমন চলছে তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বেরিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের তৃণমূল সাংসদ উমা সরেন। এ দিন উমার গন্তব্য ছিল এক সময়ে মাওবাদীদের ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়ি ব্লক এলাকা। কিন্তু এ দিন বেলপাহাড়ি ব্লক সদরের লাগোয়া জামবনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কার্যত হোঁচট খেলেন উমা। ওই প্রাথমিক স্কুলের ৪৮ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১৭ জন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের। স্কুলের দু’টি ঘরের মধ্যে একটি ঘরে অলচিকি মাধ্যমে শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ওই ১৭ জনকে পড়ানো হয়। পঠনপাঠন চলছে একটি মাত্র ঘরে। আর পাশের অন্য ঘরে বাংলা মাধ্যমে শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ৩১ জনের ক্লাস চলছে। স্কুলের শিক্ষক সংখ্যা ৩ জন। কিন্তু অলচিকি জানেন কেবলমাত্র প্রধান শিক্ষক সুকুমার সরেন। সুকুমারবাবু সাংসদকে জানালেন, “একই সঙ্গে অলচিকি ও বাংলা মাধ্যমে পড়াতে গিয়ে আমি হিমসিম খাচ্ছি। মাত্র দু’টি ক্লাস ঘরে সাঁওতালি ও বাংলা বিভাগের পাঁচটি করে (শিশু, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ) মোট দশটি ক্লাস করতে হয়।”

স্থানীয়রাও সাংসদকে জানালেন, এভাবে পড়াশুনা হয় না। স্কুল ঘরের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। আরও এক জন অলচিকি শিক্ষক প্রয়োজন। বস্তুতপক্ষে, বুধবার দিনভর বেলপাহাড়ির দু’টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও চারটি প্রাথমিক স্কুল ঘোরার পরে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যায় সাংসদের কাছে। গজপাথর প্রাথমিক বিদ্যালয়েও সেই একই সমস্যা। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া কৌশল্যা মুর্মু, শাম্বা মাণ্ডিরা বলে, “একটা ঘরে আমাদের সঙ্গে আরও চারটি ক্লাসের ছেলেমেয়েরা পড়ে। একজন মাত্র শিক্ষক। উনিই একইসঙ্গে সব ক্লাস নেন। খুবই সমস্যা হয়।” বলিচুয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠে আবার অলচিকি চালুই হয় নি। ৫৬৮ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সিংহভাগ আদিবাসী। এ দিন একটি আদিবাসী শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে ঝাড়গ্রামের সাংসদকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৩৭টি সাঁওতাল মাধ্যম স্কুলের তালিকা তুলে দেওয়া হয়। ওই শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক লুডা সরেনের অভিযোগ, “সাঁওতালি ভাষা মাধ্যমের স্কুলগুলিতে ঠিকমতো শিক্ষক নিয়োগ করা হয় নি। কিছু স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যমই নেই। অথচ সেখানে অলচিকি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ওই সব শিক্ষককে সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে পাঠালে আদিবাসী পড়ুয়াদের উপকার হতো। এ ছাড়া সাঁওতাল পড়ুয়ারা অনেক ক্ষেত্রে সময় মতো বইপত্র পাচ্ছে না।” পড়ুয়া ও শিক্ষকদের সমস্যার কথা শুনে ‘মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো’র আশ্বাস দেন উমা।

স্কুল সফরের পরে উমার দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জঙ্গলমহলের স্কুলগুলি পরিদর্শন শুরু করেছি। শিক্ষক, পড়ুয়া ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেব।” এর বাইরে আর কোনও মন্তব্য করতে চান নি উমা। তবে সাংসদের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের স্কুল গুলিতে সাঁওতালি ভাষায় ও অলচিকি লিপিতে পঠন পাঠন নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে বিস্তর ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি সাংসদের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল। বাসিন্দাদের একাংশেরও অভিযোগ, আদিবাসী-মূলবাসী বলয়ে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে গা-ছাড়া মনোভাবের ফলে, এখনও সুষ্ঠুভাবে সর্বত্র অলচিকি লিপিতে পঠনপাঠন হচ্ছে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE