সন্তোষ রাণার বাড়ি থেকে বেরোনোর পথে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
রাবড়ি বানানো সার্থক হল ভারতী রাণার। তরিবৎ করে বানানো সেই রাবড়ি চেখে দেব বললেন, বাঃ।
একটা সময় কিন্তু ভারতীদেবীর মনে হয়েছিল এ যাত্রা বোধহয় দেবকে আর রাবড়ি খাওয়ানো হল না! কিন্তু, কথা রেখেছেন দেব। সৌজন্য দেখিয়ে মঙ্গলবার রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের বার্জটাউনে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সন্তোষ রাণার বাড়িতে হাজির হলেন দেব। তারকা আসার খবর চাউর হতেই ভিড় জমে সন্তোষবাবুর বাড়ির সামনে। কোনও রকমে ভিড় ঠেলে সন্তোষবাবুর বাড়িতে পৌঁছন দেব। অত্যুৎসাহীদের ভিড় সামলে বলেন, “আশীর্বাদ নিতে এসেছি।” সৌজন্যের জন্যই যে তাঁর আসা, তা-ও জানান দেব।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী দেব রবিবার সকালে জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার রাতে তিনি চা খেতে সিপিআই প্রার্থী সন্তোষবাবুর বাড়িতে যাবেন। সন্তোষবাবুকে নিজে ফোন করে দেব সে-কথা জানিয়েছিলেন। প্রিয় নায়ক বাড়িতে আসবেন শুনে রীতিমতো প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন সন্তোষবাবুর স্ত্রী ভারতীদেবী। বিস্কুট, ভুজিয়া, নোনতার বন্দোবস্ত করে রেখেছিলেন। ছিল তিন রকমের মিষ্টিও। কিন্তু, টিভিতে যাঁর সিনেমা এত বার দেখেছেন, সেই দেব আসছে। নিজের হাতে কিছু বানিয়ে না খাওয়ালে চলে! পরিচিতদের ফোন করে, পুরনো খবরের কাগজ ঘেঁটে দেখে নিয়েছিলেন দেবের পছন্দের খাবার। নায়কের জন্য বানিয়েছিলেন রাবড়ি, গাজরের হালুয়া।
কিন্তু, অতিথিকে বসতে দেবেন কোথায়? সঙ্গে তো কিছু লোকও থাকবে। তাই বাড়ির হলঘর মঙ্গলবার সকাল থেকে সাফসুতরো করে সুন্দর ভাবে চেয়ার পেতেও রেখেছিলেন। সব আয়োজন করে বিকেলে নিশ্চিন্তে বাড়ির দাওয়ায় বসে ভাবছিলেন, কী ভাবে বর্তমানের জনপ্রিয় তারকাকে আপ্যায়ন করবেন। এমন সময়ে এল সেই ফোন। বিকেলে সন্তোষবাবুকে ফোন করে দেব জানালেন, তিনি আসতে পারছেন না। কারণ, রাত পর্যন্ত শু্যটিং চলবে। তবে, ফোনে দুঃখ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি সুপারস্টার। সন্তোষবাবুর মোবাইলে এসএমএস-ও করেন। জানান, ‘না যেতে পারার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। বৌদিকে বলবেন, অন্য কোনও এক দিন গিয়ে অবশ্যই চা খেয়ে আসব।’ খবরটা জেনেই স্ত্রীকে ফোন করেন সন্তোষবাবু বলেন, “তোমার সব খাটনি বৃথা গেল। দেব আসতে পারছে না।”
শুনে বেশ মুষড়েই পড়েছিলেন ভারতীদেবী। রাত দশটা নাগাদ সন্তোষবাবুকে হঠাৎই আবার ফোন নায়কের, ‘দাদা যাচ্ছি।’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ির সামনে দেব। যত্ন করে ভারতী দেবী তাঁকে আপ্যায়ন করে নিয়ে যান বাড়ির ভিতরে। ততটাই যত্ন করে ভিভিআইপি অতিথিকে পরিবেশন করেন চা, মিষ্টি। দেব পরে বলেন, “শু্যটিংয়ের প্রচণ্ড ব্যস্ততা ছিল। তাই মনে হয়েছিল, হয়তো যেতে পারব না। কিন্তু, মনটা খচখচ করছিল। ভাবছিলাম, কথা দিয়েও রাখতে পারব না! তাই রাত হলেও এসেছি।” সন্তোষবাবু দেবকে বলেন, ‘তুমি তো যুবসমাজের প্রতিনিধি। কেশপুরের অবস্থাটা একটু মাথায় রেখো।’ দেব নিজেই জানালেন, রাবড়ি-হালুয়া খুব ভাল লেগেছে তাঁর।
খাটনি তা হলে সার্থক হল ভারতীদেবীর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy