Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নেতাইয়ের পাকা রাস্তা সাত মাসেই খন্দপথ

পিচ পড়ার পর বছরও ঘোরেনি! এর মধ্যেই ‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প’ নেতাই গ্রামের পিচ রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় ব্লক সদরের বাঘাকুলি থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তাটির কাজ শেষ হয় গত বর্ষার আগে, জুনে।

তৈরির সাত মাসের মধ্যে বেহাল নেতাই গ্রামের রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।

তৈরির সাত মাসের মধ্যে বেহাল নেতাই গ্রামের রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
লালগড় শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫২
Share: Save:

পিচ পড়ার পর বছরও ঘোরেনি! এর মধ্যেই ‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প’ নেতাই গ্রামের পিচ রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় ব্লক সদরের বাঘাকুলি থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তাটির কাজ শেষ হয় গত বর্ষার আগে, জুনে। সাত-আট মাস যেতে না যেতেই রাস্তার বহু জায়গার পিচ উঠে বড় বড় পাথর বেরিয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের মতে, সবথেকে খারাপ অবস্থা লালগড় থেকে নেতাই এই তিন কিলোমিটারে।

প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি এই রাস্তা নিয়ে নেতাইবাসীর ক্ষোভ আঁচ করে সম্প্রতি ঠিকাদার সংস্থাকে চিঠি পাঠিয়ে রাস্তা সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছে জেলা পরিষদের পূর্ত বিভাগ। কিন্তু, কেমন এমন হল? সদুত্তর এড়িয়ে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “রাস্তাটি নিয়ে আমরাও খুবই লজ্জায় রয়েছি। কেন এমন হল জানতে ঠিকাদারের কাছে কৈফিয়ত্‌ চাওয়া হয়েছিল। কাজ তাড়াহুড়ো করে করতে হয়েছে বলে ঠিকাদার এখন নানা অজুহাত দিচ্ছেন। ঠিকাদার সংস্থাকে নোটিশ পাঠিয়ে অবিলম্বে রাস্তাটি সংস্কার করতে বলা হয়েছে। কারণ, রাস্তা তৈরির পর পাঁচ বছর তাদেরই দেখভাল করার কথা।” বহু চেষ্টার পরও ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি এই নেতাই গ্রামেই সিপিএমের শিবির থেকে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। তাতে চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসী নিহত হন। তখন নেতাই গ্রামে এসে তত্‌কালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় এলে নেতাই গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি পাকা করা হবে। রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল আসার পরে ২০১১ সালের অক্টোবরে ঝাড়গ্রামে এক প্রশাসনিক জনসভায় এই রাস্তাটি পিচের হবে বলে ঘোষণা করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তাটির শিলান্যাসও করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির জন্য ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।

২০১২ সালের এপ্রিলে লালগড়ে এক প্রশাসনিক জনসভায় নেতাই-কাণ্ডে নিহত গীতালি আদকের মেয়ে জনতা আদককে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন নেতাইয়ের রাস্তার কাজ কেমন এগোচ্ছে। প্রকাশ্য মঞ্চে জনতাদেবী জানিয়েছিলেন রাস্তার কাজ শুরুই হয়নি! তাতে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশ দেন আমলাদের। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই রাস্তার টেন্ডার দিতে কিছুটা দেরিই হয়ে গিয়েছিল। পরে কলকাতার একটি সংস্থা কাজের বরাত নেয়। ২০১২ সালের মাঝামাঝি কাজ শুরু হয়। কাজের বরাতপ্রাপ্ত মূল সংস্থাটি আবার অন্য একটি সংস্থাকে (সাব কন্ট্রাক্ট) রাস্তার কাজটি করার দায়িত্ব দেয়। কিন্তু সাব কন্ট্রাক্ট নেওয়া দ্বিতীয় সংস্থাটির কাজের গতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নেতাইবাসী। তখন মূল ঠিকাদার সংস্থাটি তৃতীয় একটি সংস্থাকে সাব কন্ট্রাক্ট দেয়। তারা কাজ শুরু করে ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ইতিমধ্যে গত বছরের গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরের আগে রাস্তার কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার সংস্থাটিকে চাপ দিতে থাকে প্রশাসন। তড়িঘড়ি কিছু অংশের কাজ হয়। শেষ পর্যন্ত গত বছর বর্ষার আগে রাস্তার কাজটি শেষ হয়। কিন্তু তৈরির পরই রাস্তার পিচ উঠতে শুরু করে। এখন বড় বড় গুটি পাথর বেরিয়ে পড়েছে। এবড়ো খেবড়ো রাস্তাটি দেখলে বোঝার উপায় নেই, যে মাত্র কয়েক মাস আগে কাজ শেষ হয়েছে।

গত ৭ জানুয়ারি নেতাই দিবসের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন শাসক দলের দুই সাংসদ মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী। দু’জনের কাছেই রাস্তাটির বিষয়ে অভিযোগ করেন নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ পণ্ডা। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় এই রাস্তার কাজ যে ভাবে হয়েছে তাতে আমরা হতাশ। সর্বশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করে অবিলম্বে রাস্তাটি মেরামত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” তাঁর অভিযোগ, “সংস্থাটি এখন বেলপাহাড়িতে অনেক নতুন রাস্তার কাজ ধরেছে। তাই এখানে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না!”

তৃণমূল পরিচালিত বিনপুর ১ (লালগড়) পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণগোপাল রায়ের বাড়ি নেতাই গ্রামেই। তিনি বলেন, “রাস্তা আর হল কই। কেউ দেখলে বলবে এটা নতুন রাস্তা! বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” সব দেখেশুনে বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের কটাক্ষ, “শাসক দলের বুথ স্তর থেকে উপর মহল পর্যন্ত সবাইকে সন্তুষ্ট করার পরে ঠিকাদার আর কী ভাবে ভাল কাজ করবেন? জঙ্গলমহলে তো এ ভাবেই উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা লুঠ হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

kinshuk gupta lalgarh netai road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE