আট মাস পেরিয়ে গেলেও টাকা মেলেনি তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছাত্রাবাসগুলিতে। চরম দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটছে আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের। টাকা না থাকলে চলবে কী করে? বাজার করতে টাকা দরকার। কতদিন আর দোকানদারেরা ধারে জিনিস দেবেন? বহু কষ্টে স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা দোকানদারদের রাজি করাচ্ছেন ঠিকই, তবু এভাবে কতদিন চলবে, দুশ্চিন্তায় পড়ুয়ারা। কেন টাকা দেওয়া হয়নি? অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সৌমেন্দু বিশ্বাস বলেন, “টাকা চেয়েছি। টাকা না আসায় দেওয়া যায়নি।” তিনি জানান, এ বার কিছু টাকা এসেছে। তা কয়েকটি ছাত্রবাসকে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে তফসিলি ছাত্রাবাস আছে ৪২৫টি। যেখানে ২৬ হাজার ৭৬০ জন ছাত্রছাত্রী থাকে। তার মধ্যে ১২ হাজার জন তফসিলি জাতির ছাত্র রয়েছে । আর ১৪ হাজার ৭৬০ জন ছাত্র রয়েছে তফসিলি উপজাতির। বছরে দু’মাস স্কুল ছুটি থাকে ধরে নিয়ে হস্টেলে ১০ মাসের খরচ বাবদ টাকা দেওয়া হয়। বছরে ছাত্র পিছু সাড়ে ৭ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে (অর্থাৎ মাসে ছাত্র পিছু বরাদ্দ থাকে সাড়ে ৭৫০ টাকা)। সেই হিসেবে তফসিলি জাতির জন্য ৯ কোটি টাকা ও উপজাতির জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার মধ্যে চলতি মাসে প্রায় ৮ কোটি টাকা এসেছে। যা মোট ২৬ হাজার ৭৬০ জন ছাত্রছাত্রীর পরিবর্তে ১১ হাজার ২৫৮ জন ছাত্রছাত্রীকে দেওয়া যাবে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর জানিয়েছে, এই টাকা সকলকে ভাগ করে দেওয়া হবে না। কয়েকটি ছাত্রাবাসকে ১০ মাসের সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। ফলে তাঁরা কিছুটা অগ্রিমও পেয়ে যাবেন। পরবর্তী ধাপে টাকা এলে এভাবেই ছাত্রাবাসগুলিকে ভাগ করে দেওয়া হবে।
এই সমস্ত ছাত্রাবাসগুলি রয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। যে সব স্কুলে তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বেশি সেখানেই এই ধরনের ছাত্রাবাস রয়েছে। পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের নিখরচায় থেকে পড়াশোনার সুযোগ করে দিতেই এই উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু প্রতি বছরই টাকা দেরিতে আসায় স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়েন। ছাত্রাবাস থাকা এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, “প্রথমে তো চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে হত। একটানা ৭-৮ মাস কে ধার দিতে চায় বলুন। সব্জি বিক্রেতা হোক বা মুদি দোকান এক এক সময় রে রে করে তেড়ে আসত। মাথা নীচু করে মেনে নিতে হত।”
সমস্যার কথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের আধিকারিকদেরও অজানা নয়। এটাও অজানা নয় যে, একটানা দেরিতে টাকা আসায় সব সময় ছাত্রাবাসে পছন্দের খাবারও দেওয়া যায় না। কারণ, আড়তদার হোক বা মুদি দোকান, কেউই ধারের খদ্দেরদের সুনজরে দেখেন না। ফলে পছন্দের জিনিসও সব সময় মেলে না। তা টাটকা সব্জি হোক বা ভাল মাছ। তাই অনেক সময় ছাত্রাবাসে থাকা পড়ুয়ারা ভাল মানের খাবার থেকেও বঞ্চিত হয়। দফতর সূত্রে খবর, এই সমস্যা সমাধানে বহু চেষ্টা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় মেনে যাতে সরকারের কাছে টাকা চাওয়া যায় সে জন্য পদক্ষেপও করা হয়েছে। তবু কিছু স্কুল ছাত্রছাত্রী সংখ্যা জানাতে দেরি করে। কিছু ক্ষেত্রে দফতরের গাফিলতিতে ফাইল পড়ে থাকে। প্রস্তাব পাঠাতে দেরি হয়। মঞ্জুর হয়ে আসতে আরও দেরি হয়। আগামীতে সমস্যা মেটাতে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy