জমি পেতে দেরি হওয়ায় পড়ে রয়েছে বরাদ্দ অর্থ। ফলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পূরণ হয়নি ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পের অর্থ খরচের লক্ষ্যমাত্রা।
২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ আর্থিক বছর মিলিয়ে ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জন্য মোট প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। চলতি আর্থিক বছরে জেলায় এই প্রকল্পে ভূমিহীন পরিবারকে জমির পাট্টা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তবে ব্যাক্তিগত মালিকানার জমি পেতে সমস্যা হওয়ায় পড়ে রয়েছে বরাদ্দ অর্থ। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তাপসকুমার বাগচী জানান, ভূমিহীনদের দেওয়ার জন্য জমি পেতে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। ফলে ওই প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ অর্থ খরচের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পে গত আর্থিক বছরে প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত জেলায় ৫৪২৩টি পরিবার জমির পাট্টা পেয়েছে। ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ আর্থিক বছর মিলিয়ে এখনও ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা রয়েছে। ওই টাকা খরচ করে সরকারি ভাবে জমি কিনে গরীব পরিবারের লোকেদের বাড়ি তৈরির জন্য জমির পাট্টা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “জমি কেনার ক্ষেত্রে কিছু স্থানীয় সমস্যার কারণে জমি পেতে দেরি হচ্ছে। তবে দরিদ্র পরিবারের লোকেদের বাড়ি তৈরির জমি কিনে দেওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।”
প্রশ্ন হল, জমি কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্বেও জমি পাওয়া যাচ্ছে না কেন?
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক জানান, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পতিত জমি প্রায় নেই বললেই চলে। জেলার অধিকাংশ এলাকার কৃষিজমিই খুব উর্বর। এইসব জমির অধিকাংশই বহুফসলী। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধানের পাশাপাশি পান, ফুল, সব্জি, মাছের মতো বিভিন্ন অর্থকরী ফসলও চাষ হয়। ফলে জমির উপর মানুষের নির্ভরশীলতা বেশি হওয়ায় জমির মালিকরা সহজে জমি বিক্রি করতে চায় না। তাছাড়া জেলায় জনঘনত্বের হার তুলনায় বেশি হওয়ায় মাথাপিছু জমির পরিমাণও কম। ফলে একলপ্তে জমি মালিকদের থেকে বেশি পরিমাণ জমি পেতে অসুবিধা হয়।
জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পে গ্রামের গরীব পরিবারের লোকদের বাড়ি তৈরির জন্য সরকারিভাবে ৪ থেকে ৬ ডেসিমল পর্যন্ত জমির মালিকানা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ওই প্রকল্পে সরকারি খাসজমিতে পাট্টা দেওয়া ছাড়াও ব্যক্তিগত মালিকানার জমি বাজার দরে কিনে তা গরীব পরিবারকে দেওয়ার সংস্থান রয়েছে। ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন জমি কিনে সেখানে একাধিক পরিবারের বসবাসের বাড়ি তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনকে অর্থও বরাদ্দ করা হয়। ওই জমিতে বাড়ি তৈরির জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনা, অধিকার প্রকল্প থেকে অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে জমি না মেলায় পড়ে রয়েছে বরাদ্দ অর্থও।
২০১২-১৩ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে জেলার জন্য ২ কোটি ৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। ওই আর্থিক বছরে জেলার মোট ২৯৪৫টি পরিবারকে বাড়ি তৈরির জন্য সরকারি খাস জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ৬৮৫টি তফশিলি জাতি, ২৩৮টি তফশিলি উপজাতি ও ৪০২টি সংখ্যালঘু পরিবার রয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি কিনে ১৪৮টি পরিবারকে সেই জমি দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ওই প্রকল্পে সরকারিভাবে ৩০৯৩টি দরিদ্র পরিবারকে জমি দেওয়া হয়েছিল। তবে ব্যাক্তিগত জমি কেনার জন্য বরাদ্দ ২ কোটি ৯ লক্ষ টাকার মধ্যে জেলা প্রশাসন প্রায় ১ কোটি ৬ লক্ষ টাকা খরচ করতে পেরেছিল। ফলে ওই আর্থিক বছরে বরাদ্দ অর্থের প্রায় অর্ধেকই খরচ করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে জেলার জন্য আরও প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। ফলে দুই আর্থিক বছর মিলিয়ে নিজভূমি-নিজ গৃহ প্রকল্পে প্রশাসনের হাতে প্রায় ৩ কোটি টাকা রয়েছে। গত ৫ মার্চ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় থমকে গিয়েছে প্রকল্পের কাজ। ফলে বরাদ্দ অর্থ
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি’ প্রকল্পের সুবিধা পেতে প্রায় পাঁচশোটি পরিবার আবেদন করেছিল। তার মধ্যে ১২৬টি পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়। তাদের মধ্যে ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত ২০টি ভূমিহীন পরিবারকে জমি দেওয়া গিয়েছে। এদের সকলকেই সরকারি খাস জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি বিভাস কর বলেন, “ওই প্রকল্পে ভূমিহীনদের জমি দেওয়ার জন্য রঘুনাথপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু জমি কেনার কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় বাকিদের এখনও জমি দেওয়া যায়নি।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে ওই প্রকল্পে জেলায় ভূমিহীন প্রায় ৪ হাজার পরিবারকে জমি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। সেইমতো জেলায় ৫৪২৩টি ভূমিহীন পরিবারকে জমির পাট্টা দেওয়া হয়। এরমধ্যে অধিকাংশই সরকারি খাসজমি পাট্টা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থে ব্যাক্তিগত মালিকানার জমি কিনে তা দরিদ্র পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পরিমাণ খুবই সামান্য।
জেলা পরিষদের বন-ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মৃণালকান্তি দাস বলেন, “এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য গরীব পরিবারকে দেওয়ার জমি কেনার ক্ষেত্রে কিছু পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে জমি পেতে দেরি হচ্ছে। ফলে সময়মতো বরাদ্দ অর্থ খরচ করা যায়নি। তবে গরীব পরিবারগুলিকে দেওয়ার জন্য দ্রুত জমি কিনতে ব্লক স্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy