চকোলেট বোমা ফাটানোয় কিশোরকে মারধরের অভিযোগ উঠল পড়শি যুবকের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে খড়্গপুরের ওল্ড ডেভেলপমেন্ট-এর বিএনআর পুকুরের কাছে। মারধরে গুরুতর জখম বছর পনেরোর কিশোর শুভম শাহ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুভম চকোলেট বোমা ফাটানোয় পড়শি বছর আঠাশের যুবক সন্দীপলাল চৌধুরী তাকে মারধর করেছে বলে টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন জখম কিশোরের দাদা। এমন ঘটনা রেলশহরে লাগামহীন শব্দবাজির দৌরাত্ম্যকে ফের প্রকাশ্যে আনল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধে থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে শব্দবাজি ফাটাচ্ছিল শুভম। বন্ধুরা চলে যাওয়ার পরেও শুভম একটি চকোলেট বোমা রাস্তার দিকে ছুঁড়ে দেয় বলে অভিযোগ। রাস্তা দিয়ে যাওয়া সন্দীপের সামনেই বোমাটি ফাটে। চটে যান সন্দীপ। অভিযোগ, তখনই শুভমকে বেধড়ক মারধর করেন তিনি। গুরুতর জখম শুভমকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, চিকিৎসাধীন শুভমের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। জখম কিশোরের দাদা অমরনাথ শাহ বলেন, “ওই চকোলেট বোমা আমরা কিনে দিইনি। বন্ধুদের থেকে কোনও ভাবে পেয়ে ফাটাচ্ছিল।” তাঁর মন্তব্য, “সন্দীপের পায়ের থেকে দূরে বোমাটি ফেটেছে। ভাইকে এ ভাবে মারায় সন্দীপকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।”
বস্তুত, আলোর উৎসবে মেতে উঠতে রেলশহরের কচিকাঁচাদের মধ্যেও উৎসাহ তুঙ্গে। সচেতনতার অভাবে ছোটদের হাতেও পৌঁছে যাচ্ছে শব্দবাজি। কিন্তু প্রশ্ন হল, কী ভাবে শব্দবাজি খুদে বালক থেকে ক্লাব কর্মকর্তার হাতে পৌঁছচ্ছে? সংশ্লিষ্ট নানা জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর সদরের ছেড়ুয়া-সহ খড়্গপুর মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে এখন আতসবাজি তৈরির প্রস্তুতি তুঙ্গে। তার সঙ্গেই গোপনে তৈরি হচ্ছে চকোলেট বোমা থেকে ‘ভূমিকম্প বোমা’। হাত বদলে সেই বোমা আসছে খড়্গপুর-মেদিনীপুরে।
শুধু কী রকেট আর চকোলেট বোমা? জানা গেল, বদলে যাওয়া রুচির সঙ্গেই বাজার ধরতে শব্দবাজির সম্ভার বেড়েছে। বেড়েছে তেজও। গাছ বোমা তো ছিলই, এখন জল বোমা, আসমানগোলা, পাইপবোমা, ভূমিকম্প বোমা-সহ নানা নামে দেদার বিকোচ্ছে শব্দবাজি। বেলদার গুড়দলা, নারায়ণগড়ের কোতাইগড়, খড়্গপুরের গোকুলপুর এই ব্যবসার উৎকৃষ্ট স্থান। এ ছাড়াও খড়্গপুর গ্রামীণের মাওয়া, চন্দ্রি, দক্ষিণগেরিয়া, পিংলার দুজিপুর, দাঁতনের তুরকা গ্রামের রায়পুর, এমনকী খড়্গপুর কল্যাণ মণ্ডপের মাঠ সংলগ্ন কিছু ঝুপড়িতে চলছে শব্দবাজি তৈরি। বিধির তোয়াক্কা না করে বাড়িতেই বোঝাই কাঠকয়লা, এসপি, পাইরো পাউডার, পিবিসি ইত্যাদি বাজির মশলা।
এ বছরও বাজার জমেছে ভালই। গত বছর বর্ষা থাকায় মার খেয়েছিল ব্যবসা। এ বছর দুর্গাপুজোর আগে থেকেই বাজি প্রস্তুতের উপযুক্ত আবহাওয়া ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে গুড়দলা সংলগ্ন এলাকার লোচন দাস অধিকারীর কারখানায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুই কারিগরের। তাঁতেও হুঁশ ফেরেনি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তারপরও এলাকার অনেকেই বাজি তৈরি করে চলেছেন।
গ্রাম থেকে আসা ওই সব বাজি শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দরে। পাইকারে দর অনুযায়ী, এ বছর একটি পাইপবোমা ৫০ টাকা, ৬০টি শটের একটি ক্যারেটের দাম হাজার থেকে শুরু, আসমানগোলা ৬০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, সুইট সিক্সটি ১৬টির প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে চারশো টাকায় আর সিটিবোমার প্যাকেট দু’শো টাকা। এগুলি খুচরো বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেশি দামে। পুলিশি নজরদারি সত্ত্বেও দেদার বিকোচ্ছে তা। শহরের এক সাব ইন্সপেক্টরের কথায়, “আমরা তল্লাশি চালাই। ধরাও পড়ে। কিন্তু, কিছু রাজনৈতিক নেতা অনেক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। তাই অনেক ক্ষেত্রেই কিছু করার থাকে না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy