মেদিনীপুর মেডিক্যালে আহত অভিজিত্। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
তৃণমূল প্রার্থীর কনভয়ের একটি গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হল চার বছরের এক শিশু। রবিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাঁকরাইল থানার রোহিণী অঞ্চলের ধবাশোল গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। শিশুটিকে ধাক্কা দেওয়ার পরেও কনভয়ের গাড়িগুলি থামেনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ঘটনার পর ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ধবাশোলে রোহিণী-ডাহিচক পিচ রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করে রাখেন। অবরোধ তুলতে যাওয়া সাঁকরাইল থানার একটি গাড়িকেও আটক করে রাখেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
যাঁর কনভয়ের গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, ঝাড়গ্রাম লোকসভায় তৃণমূলের সেই চিকিত্সক প্রার্থী উমা সরেন বলেন, “কনভয়ে অনেক গাড়ি ছিল। আমার বা দলের নেতা-কর্মীদের কোনও গাড়িতে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি আমার নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে আগে শিশুটির চিকিত্সা করতাম, তারপর প্রচারে যেতাম।” উমাদেবীর দাবি, ডাহিচকে পৌঁছে ঘটনার কথা জানতে পারেন তিনি। তারপরই তৃণমূলের সাঁকরাইল ব্লক কমিটির সদস্য সুনন্দ মাইতির নেতৃত্বে দলীয় কর্মীদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এ দিন সকালে সাঁকরাইলের ডাহিচকে প্রচার কর্মসূচি ছিল ঝাড়গ্রাম লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেন। তৃণমূল প্রার্থীর কনভয়ে দলীয় নেতা-কর্মী, পুলিশ, নির্বাচনী বিধি খতিয়ে দেখার জন্য কমিশনের কর্মী ও সংবাদমাধ্যম মিলিয়ে দশ-বারোটি গাড়ি ছিল। একটি গাড়িতে মাইক বেঁধে উমার সমর্থনে প্রচার করতে করতে যাচ্ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, ধবাশোলের কাছে পিচ রাস্তায় বাঁক রয়েছে। সেখানে দ্রুত গতিতে কনভয়ের গাড়িগুলি যাওয়ার সময় একটি গাড়ির সামনে চলে আসে ধবাশোল গ্রামের বাসিন্দা বছর চারেকের অভিজিত্ মাহাতো। রাস্তার ধারেই তার বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাইকের শব্দ শুনে কচিকাঁচারা ভিড় করেছিল। এসেছিল অভিজিত্ও। রাস্তার ধার ঘেঁষে দ্রুত গতিতে যাওয়া কনভয়ের একটি সাদা গাড়ির সামনে পড়ে যায় সে। গাড়িটির ধাক্কায় রাস্তার ধারে ছিটকে পড়ে। তার মাথায়, বাঁ হাতে ও নিম্নাঙ্গে গুরুতর আঘাত লাগে। কান ও নাক দিয়ে রক্ত বেরোতো থাকে।
পরে তৃণমূলের লোকজনই শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে সাঁকরাইলের ভাঙাগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘রেফার’ করা হয়। দুপুর একটা নাগাদ অভিজিত্কে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঘন্টাখনেকের মধ্যেই তাকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। অভিযোগ, মেদিনীপুর মেডিক্যালে অভিজিতের পরিজনদের সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা কথা বলতে গেলে সাঁকরাইল থেকে আসা তৃণমূলের কর্মীরা বাধা দেন। উত্তেজিত তৃণমূল কর্মীরা জানিয়ে দেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। তিনিই বিষয়টি দেখবেন।” অভিজিত্ এখন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, তার ফিমার বোন ভেঙে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার করতে হবে।
তৃণমূলের সাঁকরাইল ব্লক সভাপতি সোমনাথ মহাপাত্র বলেন, “এ দিন ডাহিচকে উমাদেবীর প্রচার কর্মসূচি ছিল। কনভয়ের সামনের গাড়িটিতে আমি ছিলাম। ফলে পিছনের গাড়িতে কী হয়েছে দেখতে পাইনি। ডাহিচকে এসে খবর পাই কোনও একটি গাড়ির ধাক্কায় একজন শিশু আহত হয়েছে। খবর পেয়েই দলীয় কর্মীদের ধবাশোলে পাঠাই। দলীয় কর্মীরাই শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।” তবে যে গাড়িটির ধাক্কায় শিশুটি জখম হয়, সেই গাড়িটির কোনও নম্বর প্লেট ছিল না বলে দাবি করেছেন সোমনাথবাবু। সাধারণত জঙ্গলমহলে পুলিশের গাড়িতে নম্বর প্লেট থাকে না। যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy