এগরা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে রাস্তা সারাই।
কোথাও চলছে বড় পাকা নিকাশি নালা তৈরির কাজ। কোথাও যুদ্ধকালীন গতিতে চলছে নতুন করে আলো লাগানোর কাজ। আর পুরসভার ভোট প্রচারের সাথে তৃণমূল পরিচালিত তমলুক পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে দ্রুত গতিতে চলা কাজের বহর নিয়ে মুখর বিরোধীরা। অভিযোগ, পুরসভার পাঁচ বছরের ব্যর্থতা ঢাকতে ভোটের মুখে এই কাজ করে ভোটারদের প্রভাবিত করতে চাইছে তৃণমূল। অবশ্য তৃণমূলের দাবি, রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পরে শহরের উন্নয়নে গত চার বছরে পুরসভা প্রচুর কাজ করেছে। এর মধ্যে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক শহরের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নে পুরসভার ৮ টি ওয়ার্ডে হাইড্র্যান্ট তৈরির জন্য প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কয়েক মাস আগে পুরসভা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাকা নিকাশি নালা তৈরি শুরু করে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পদুমবসান এলাকায় এখনও হাইড্র্যান্ট তৈরির কাজ চলছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দত্তের অভিযোগ, ‘‘ভোটের প্রক্রিয়া শুরু কিছুদিন আগে এলাকায় পাকা নিকাশি নালা তৈরির কাজ শুরু করে এখনও তা চলছে। তা দেখিয়েই তৃণমূল প্রার্থী এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন।’’ বিদায়ী কাউন্সিলর তথা তৃণমূল প্রার্থী শিখা মাইতি অবশ্য বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরেই নিকাশি ব্যবস্থার কাজ চলছে। এখন যে কাজ হচ্ছে তা পুরভোটের প্রক্রিয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই চলছে।’’ হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে গত প্রায় এক বছর আগে খুঁটি-সহ আধুনিক পথবাতি বসানোর কাজ করেছিল হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। বর্তমানে শহরের মানিকতলা মোড় থেকে জেলখানা মোড়, স্টিমারঘাট, বড়বাজার হয়ে নিমতলা ও স্টেডিয়াম গেট পর্যন্ত শহরের ভিতরের প্রধান রাস্তার ধারে নতুন করে পথবাতি বসানোর কাজ করছে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। পুরসভা নির্বাচনের মুখে ওই কাজ শুরু হয়ে তা দ্রুত গতিতে চলছে। পুরসভা নির্বাচনের মুখে নতুন করে ওই আলোর স্তম্ভ বসানোর ও বিদ্যুতের তার পাতার কাজ করার জন্য শহরের রাস্তার কিছু এলাকায় মাটি খুড়ে আলোক স্তম্ভ বসানো শুরু করেছিল। এমনকি মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাস্তার ধারে নতুন ওই আলোকস্তম্ভে আধুনিক বাতি(এলইডি) লাগানোর কাজ চলছে যুদ্ধকালীন গতিতে।
তমলুক শহরে চলছে এলইডি পথবাতি লাগানো।
বিজেপি’র জেলা সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাসের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার ব্যর্থতা ঢাকতে ভোটের মুখে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ থেকে অর্থ বরাদ্দ করে আলো বসানো হচ্ছে।’’ পুরসভার বিরোধী দলনেতা প্রদ্যোত দে’র অভিযোগ, ‘‘তমলুক শহরের পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নে তৃণমূল পুরবোর্ড ব্যর্থ। এখন নির্বাচনের মুখে কয়েকমাস আগে তৈরি শহরের রাস্তার ফুটপাথ খুড়ে আলোর স্তম্ভ বসানো ও তার পাতার কাজ করা হচ্ছে।’’ তবে এই সব অভিযোগকে আমল দিতে রাজি নন তমলুকের বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি বলেন, ‘‘পর্ষদ শহরের প্রধান রাস্তাগুলিতে আধুনিক আলো বসানোর কাজ হচ্ছে। আগেও এই কাজ হয়েছে। ফলে পুরসভা নির্বাচনে মুখে কাজের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত।’’
তমলুক শহরে এইচডিএর আলো বসানোর কাজ প্রসঙ্গে তমলুকের সাংসদ তথা এইচডিএর চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘এটা একটা ধারাবাহিক কাজ। আগে একটা পর্যায়ের কাজ হয়েছে। এখন অন্য পর্যায়ের কাজ চলছে। এ পর আবার বাইপাস রাস্তার কাজ হবে। এর সঙ্গে পুরভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
কাঁথি শহরের ছবিটা প্রায় একই। পুরসভার ৬ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণকান্ত পুকুর থেকে শনিমন্দির পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ পিচ রাস্তাটির ঢালাই করা হচ্ছে। দিন কয়েক আগেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হাইড্র্যান্ট-এ কাজ শেষ হয়েছে। বিজেপির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও কাঁথি পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা পরিতোষ দাস অভিযোগ করেছেন, “ওয়ার্ডগুলিতে পাঁচ বছর ধরে উন্নয়নের কাজ না করে এখন ভোটের মুখে কাজ করা হচ্ছে।’’ সিপিএমের কাঁথি জোনাল সম্পাদক হরপ্রসাদ ত্রিপাঠীর অভিযোগ, ‘‘বামফ্রন্ট উন্নয়নের বিপক্ষে নয়। কিন্তু উন্নয়নের কাজের সময় কাজ না করে পুরভোটের মুখে এ ভাবে পুর উন্নয়নের কাজ আসলে ভোটারদের প্রভাবিত করা।’’ তবে অভিযোগ উড়িয়ে কাঁথি পুরসভার কাউন্সিলার ও বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘পুর নিবার্চনের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার আগে থেকেই রাস্তার কাজটি হচ্ছে। আর উন্নয়নের কাজ পুর নির্বাচনের সময় যে করা যাবে না, এমন কোনও বিধি নেই। অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
ঘাটাল পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশির কাজ চলছে।
এগরা পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডে রাজশ্রী হলের পেছনের মহাজনিয়া রোড, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অলুয়া রোড ও বস্তিয়া রোড, ৮ নম্বরের মহেশপুর রোড, ৯ ও ১০ এর বাসাবাড়ি রোড, ১১ নম্বরের জগ্ননাথপুর রোড, ১২ নম্বরের হরিমঞ্চ রোড-সহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ চলেছে। পুরসভার পুর-ইঞ্জিনিয়ার চন্দন দাস বলেন, ‘‘পুরসভার প্রশাসকের অনুমতি মেলায় কাজগুলি শেষ করার কাজ চলছে। তবে এখন নতুন করে কোন কাজ হচ্ছে না।’’ এগরা পুরসভার প্রশাসক ও মহকুমাশাসক অসীম কুমার বিশ্বাস বলেন- "রাস্তাগুলির কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়েছিল।খুব খারাপ অবস্থার অভিযোগ পেয়ে কাজগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত কনট্রাক্টরদের কাজ শেষ করতে বলি"।তবে কাজগুলি আগে না হয়ে পুরভোটের মধ্যে কেন? এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন-‘‘এগুলি আগের চালু কাজ। তাই সেইগুলি শেষ করার কাজ চলছে।’’
একই ছবি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভাতেও। ঘাটালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি তৈরির কাজ চলছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার কাজ চলছে। চন্দ্রকোনার প্রায় সব ওয়ার্ডেই পানীয় জলের সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরার অভিযোগ, ‘‘অনেক কাজেরই ওয়ার্ক অর্ডার রয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মানুষ এই অন্যায় দেখছেন। তাঁরাই এর প্রতিবাদ করবেন।’’ ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাসচন্দ্র ঘোষ বলেন, “ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণর আগেই সব ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গিয়েছিল। সেই কাজ তো এক দিনে শেষ হবে না। এখন সেই কাজই চলছে।”
(তথ্য সহায়তা: আনন্দ মণ্ডল, সুব্রত গুহ, কৌশিক মিশ্র এবং অভিজিৎ চক্রবর্তী)
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy