Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

করোনা-ভয়, বাড়ছে বাড়িতে প্রসব

গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ব্লক হাসপাতালগুলির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান প্রসব করানোর ব্যবস্থা সেখানে থাকে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

গোপাল পাত্র
এগরা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ০৮:৩১
Share: Save:

করোনার দাপট দিন দিন বেড়েই চলেছে জেলায়। সংক্রমণের ভয়ও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুরের বহু অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকেই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর বদলে বাড়িতে রেখেই প্রসব করানোর প্রবণতা বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব নিশ্চিত না হওয়ায় বেশ কিছু প্রসূতির মৃত্যুও হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ব্লক হাসপাতালগুলির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান প্রসব করানোর ব্যবস্থা সেখানে থাকে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আশাকর্মীরা অন্তঃসত্ত্বা এবং প্রসূতিদের পরিসংখ্যান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলিতে দিয়ে থাকেন। ব্লক হাসপাতাল থেকে সেই তথ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পৌঁছয়। পরে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো গ্রামীণ এলাকার ওই মহিলাদের নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিষেধক-সহ সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়।

কিন্তু অভিযোগ, অতিমারি পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্তদের দিকে নজর রাখতে গিয়ে প্রসূতিদের উপর ধারাবাহিক নজরদারির এই কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই ফোনে প্রসূতিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নজরদারি চালাচ্ছেন আশাকর্মীরা। এক দিকে, হাসপাতালে গেলে করোনা সংক্রমণের ভয়, অন্য দিকে, স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারির অভাবে বাড়িতে প্রসব বাড়ছে বলে দাবি। ভরসা করা হচ্ছে হাতুড়ে চিকিৎসকদের উপরে। পরে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে পরিজন ছুটছেন হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।

পটাশপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র তুপচিবাড় গ্রাম থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে । গত বৃহস্পতিবার ওই গ্রামের বাসিন্দা সাহিদা খাতুন বিবি প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করলেও ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাননি পরিজন। উল্টে হাতুড়ে এবং আয়ার ভরসায় সন্তান প্রসব করানো হয়। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে সাহিদা এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়। মৃতার পরিবার লোকেরা মানছেন, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়নি। এভাবে দুর্ঘটনা হবে তাঁরা বুঝতে পারেননি।

গত জুনেও এগরা-১ ব্লকে বাড়িতে হাতুড়ের ভরসায় এক মহিলা সন্তান প্রসব করেন। পরে অসুস্থ অবস্থায় দু'জনকে এগরা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে মা ও সন্তান অবশ্য সুস্থ আছে।

পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলার পরিসংখ্যন বলছে, ২০১৯-’২০ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের স্বাস্থ্য জেলায় প্রতি এক হাজার জনসংখ্যায় গড়ে ১৫টি শিশুর জন্ম হয়েছে। চলতি বছরে সেই সংখ্যা কমে এক হাজারে ১৪টি শিশু হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে। গোটা ২০১৯ সালে জেলায় মোট ৫১ হাজার ০৭৯ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। যার মধ্যে বাড়িতে শিশুর জন্ম হয়েছে ৫০৯টি। সেই তুলনায় ২০২০-’২১ সালের শুধু এপ্রিল-মে মাসে ন’ হাজার ১৫৯টি শিশুর জন্ম হয়েছে। যার মধ্যে ১২১ শিশুই বাড়িতে জন্মেছে।

স্বাস্থ্যকর্তাদের অবশ্য দাবি, নজরদারিতে কোনও ঘাটতি থাকছে না। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষের অসচেতনতার জন্যই এই ধরনের ঘটনাগুলি ঘটছে। তবে পটাশপুর-সহ পূর্ব মেদিনীপুরে আগের থেকে অনেকটাই হোম ডেলিভারি কমেছে।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Newborn
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy